• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

৭ জানুয়ারি : সংকটের শুরু না শেষ?


আমীন আল রশীদ
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম
৭ জানুয়ারি : সংকটের শুরু না শেষ?
আমীন আল রশীদ

বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। এটি বাঙালির জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথা ঐতিহাসিক দিন। কেননা, এর ঠিক দুই বছর আগের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে রেখেই বিজয়ের সোয়া এক বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া দেশের পুনর্গঠন এবং অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনের অজুহাতে বঙ্গবন্ধু চাইলে অন্তত পাঁচ বছর নির্বাচন না দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশ চালাতে পারতেন। ওই সময়ে তাঁর এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগের যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তাতে ১৯৭৩ সালে নির্বাচন না দিলে এ নিয়ে দেশে খুব বেশি প্রতিবাদ হতো বলে মনে হয় না। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। এবারও নির্বাচন হচ্ছে সেই ৭ তারিখেই।

১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন। এতে অংশ নেয় ১৪ দল। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে ওই সময়ে দেশে আওয়ামী লীগের বিকল্প ছিল না—এমন একটি বাস্তবতায় যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে শত ভাগ অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও ওই নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিডিজেএল) ১টি এবং পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি ২৯৩টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। ওই সংসদে সংসদ নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরে মুনসুর আলী। কেউ বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন না।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৪ জন। ২৯টি দল অংশগ্রহণ করে। বিজয়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পায় ২০৭টি আসন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (মিজান) ২, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৮, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, অন্যান্য দল ৮ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ১৬টি আসনে। এই সংসদের সংসদ নেতা ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। বিরোধীদলীয় নেতা আসাদুজ্জামান খান।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৯। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ২৮। বিজয়ী জাতীয় পার্টি পায় ১৫৩টি আসন। এর বাইরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭৬, জামায়াতে ইসলামী ১০, অন্যান্য দল ২৯, স্বতন্ত্র ৩২। সংসদ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। মোট ভোটার ছিল ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৯ জন। অংশগ্রহণ করে ৯টি দল। বিজয়ী জাতীয় পার্টি পায় ২৫১টি আসন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করে। সম্মিলিত বিরোধী দল পায় ১৯টি। অন্যান্য দল ৫ এবং স্বতন্ত্র ২৫টি আসন। চতুর্থ সংসদের সংসদ নেতা ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, পরে কাজী জাফর আহমেদ। বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন জাসদের আ স ম আব্দুর রব।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (রব) উদ্যোগে ‘কম্বাইন্ড অপোজিশন পার্টিস (কপ)’ নামে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠিত হয় এবং তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। তারা মাত্র ১৯টি আসন পাওয়ায় প্রথমে সংসদীয় গ্রুপের মর্যাদা লাভ করলেও বিরোধী দলের মর্যাদা পায়নি। পরে অন্যান্য দলের আরও ১৪ জন সংসদ সদস্য আ স ম আবদুর রবকে নেতা মেনে নিয়ে স্পিকারের কাছে আবেদন করেন। স্পিকার তাকে বিরোধী দলের নেতার স্বীকৃতি দেন। এবারও এ রকম কিছু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতি নতুন যুগে প্রবেশ করে মূলত ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৬ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৩। অংশগ্রহণ করে ৭৫টি দল। বিজয়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পায় ১৪০টি আসন। আওয়ামী লীগ ৮৮টি। তখনো আওয়ামী লীগের একটি অংশ বাকশালে সক্রিয় ছিল। ফলে অনেকেরই ধারণা, আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি না থাকলে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তারা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করত। বাকশাল এই নির্বাচনে ৫টি আসনে জয়লাভ করে। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বাকশাল একীভূত হয়ে যায়।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক দলের আন্দোলনের মুখে যে জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন, তার দলও এই নির্বাচনে ৩৫টি আসন পায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এরশাদই সম্ভবত একমাত্র সামরিক শাসক, যিনি বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখল করে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরে আবার মূলধারার রাজনীতিতে ‘ফ্যাক্টর’ হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতও হয়েছিলেন এবং সম্মনজনক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। যেকোনো সামরিক শাসকের জন্য এটি বিরাট ঘটনা।

১৯৯১ সালের নির্বাচনটি আরও যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীও ১৮টি আসনে জয় পায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদে গৃহীত সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র তথা প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারব্যবস্থা চালু হয়। এই সংসদে সংসদ নেতা ছিলেন খালেদা জিয়া। আর বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের দুই দশক পরে একটি নতুন সম্ভাবনার দিকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ।

১৯৯১ সালের নির্বাচন হয়েছিল একধরনের কেয়ারটেকার পদ্ধতিতে। কিন্তু এর সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। ছিল না বলেই ১৯৯৪ সাল থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৯৯৫ সালে আন্দোলনের গতি আরও বাড়ে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এটি ছিল ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচনটি ছিল একতরফা। অর্থাৎ বিরোধী দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ক্ষমতাসীন বিএনপি পায় ২৭৮টি আসন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারীদের দল ফ্রিডম পার্টিও একটি আসনে জয় পায়। এই সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। মূলত এই সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করা হয়।

সাংবিধানিকভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৫ জন। অংশগ্রহণ করে ৮১টি দল। বিজয়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পায় ১৪৬টি, বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি, জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন। সপ্তম সংসদের সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

সপ্তমের ধারাবাহিকতায় হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৪। অংশগ্রহণ করে ৫৪টি দল। বিজয়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পায় ১৯৩টি আসন। আওয়ামী লীগ ৬২টি, জামায়াতে ইসলামী ১৭টি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট ১৪টি আসন। সংসদ নেতা খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবার একটি ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান থাকলেও নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে বেশ কিছু কৌশল নেয় বিএনপি। বিরোধী দল আওয়ামী লীগ যার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। সংঘাত-সংঘর্ষে দেশ ভয়াবহ সংকটে নিপতিত হয়। আসে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্ববধায়ক সরকার, যেটি ওয়ান ইলেভেনে বা এক-এগারোর সরকার নামে পরিচত। প্রয়াত কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের ভাষায় ‘তিনোদ্দীনের সরকার’ (ইয়াজউদ্দীন, ফখরুদ্দীন, মঈনুদ্দীন)।

এক-এগারোর সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। ফলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে যায়। ভোট হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে ভোটার তালিকায়ও কারসাজি করা হয়েছিল। ফলে নতুন করে তালিকা হয়। অবশেষে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। এই নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৮টি দল। বিজয়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় হয়। তারা পায় ২৩০টি আসন। বিএনপি মাত্র ৩০টি, জাতীয় পার্টি ২৭টি আসন। এই সংসদের নেতা শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। অর্থাৎ মোটাদাগে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কিন্তু পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটি বড় ধরনের ধাক্কা খায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে। অংশগ্রহণ করে মাত্র ১২টি দল। ১৫৩টি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন, যা দেশের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২৩৪টি আসন। জাতীয় পার্টি ৩৪টি। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ।

মূলত দশম সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তারা মাত্র ৬টি আসন পায়। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ এসেছে যে, এই নির্বাচনটি হয়েছে ‘আগের রাতে’।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। অংশগ্রহণ করে ৩৯টি দল। বিজয়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পায় ২৫৮টি এবং জাতীয় পার্টি ২২টি আসন। বিএনপি সংসদে থাকলেও যেহেতু তাদের আসন ছিল খুবই কম এবং আসনপ্রাপ্তির দিক দিয়ে জাতীয় পার্টি ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ফলে তারা হয় বিরোধী দল। এই সংসদেও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পরবর্তী সময়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।

এবার কী হচ্ছে?

এবার বিএনপি আনুষ্ঠাকিভাবে নির্বাচনে নেই এবং তারা জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। ফল এটি ধারণা করা যায় যে, বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এবার ভোট দিতে যাবেন না। কেউ হয়তো নৌকার বিরোধী প্রার্থীকে ভোট দিতে যাবেন। কেউ আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের খাতিরে যাবেন। কেউ যাবেন চাপে পড়ে। কিন্তু তারপরও যেহেতু অধিকাংশ আসনে কারা জয়ী হবেন, সেটি মোটামুটি নিশ্চিত, ফলে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। যে কারণে এবার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বেশ নমনীয়। কারণ, যেসব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, সেখানে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে। কারণ সব প্রার্থী নিজেদের ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যাপারে সোচ্চার থাকবেন। কিন্তু যেসব আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সেসব আসনে ভোটারদের নিয়ে আসা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপরে ভোটার নিয়ে আসার ব্যাপারে চাপ থাকবে। ভোটার নিয়ে আসার ব্যাপারে কোথাও কোথাও জোর জবরদস্তিও হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেননা বিএনপির মতো একটি দল এবং তাদের জোট এই নির্বাচন বয়কট করায় এটি দেশে-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সেটি নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে চিন্তা আছে। শেষ পর্যন্ত যদি ভোটে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ এবং অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং প্রশাসনিক চাপমুক্ত নির্বাচন করা যায় এবং শেষ পর্যন্ত ভোটে এটি উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এটি ‘গ্রহণযোগ্য’ হয়েছে বলে সরকার দাবি করতে পারবে। কিন্তু ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়ে গেলেই রাজনৈতিক সংকটের অবসান হয়ে যাবে নাকি নতুন সংকটের শুরু হবে, সেটি এখনই বলা মুশকিল।

লেখক : কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

Link copied!