• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়দাতা : প্রধানমন্ত্রী


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২১, ০৭:২২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়দাতা : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার বিচার সম্পন্ন হলেও হত্যা চক্রান্তের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদেরকেও খুঁজে বের করা হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশিত মুজিব স্মারকগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড দ্য জুডিশিয়ারি’ এবং মুজিববর্ষ স্মরণিকা ‘ন্যায় কন্ঠ’-এর মোড়ক উন্মোচন করে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

এছাড়া বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে না দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র মুখে গণতন্ত্র আর ন্যায় বিচারের কথা বললেও খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা পরবর্তী রাজনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশে আইনের শাসন কায়েম হবে। আইনে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কেঁদেছে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স পাস হলো। সেই অর্ডিন্যান্সে বলা হলো, ওই খুনীদের কোনোদিন বিচার করা যাবে না। ওই হত্যায় মামলা করা যাবে না।”
 
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ সব অধিকার হারিয়েছিল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। 

সরকারপ্রধান বলেন, “কারবালাতেও বোধহয় শিশু ও নারীকে এভাবে হত্যা করা হয়নি। কারবালার ঘটনাকেও হার মানিয়েছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড।”

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতিতে বিস্মিত প্রধানমন্ত্রী

এদিকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করতেও ছাড়েননি শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা যুক্তরাষ্ট্রের মতো জায়গা, তারা সবসময় ন্যায় বিচারের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, তারা মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আমরা যে ন্যায়বিচার পাইনি, তারপর যখন এই বিচার হল, তখন খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে। আমি ক্ষমতায় আসার পর বার বার যতজন রাষ্ট্রপতি এসেছেন প্রত্যেকের কাছে বার বার অনুরোধ করেছি যে একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা কীভাবে আশ্রয় দেন। আপনাদের জুডিশিয়ারি কীভাবে আশ্রয় দেয়। কীভাবে একটা খুনিকে আশ্রয় দেন।”

খুনি রাশেদ চৌধুরীর কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে খুনিটা ১৫ আগস্ট আমার সেজ ফুফুর বাড়ি আক্রমণ করে, সেখানে যে গ্রুপটা যায়, সেখানে কমান্ডিং অফিসার ছিল ওই রাশেদ। সেই খুনি এখনও আমেরিকায়। তাকে আজ পর্যন্ত কেউ ফেরত দিল না। আমেরিকা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলে আর খুনিদের আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়। কেন? আমি জানি না। তারা নাকি সব থেকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ।”

অন্যদিকে খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা আশ্রয় দিয়ে রেখেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছ থেকে আমাদের আইনের শাসনের ছবকও শুনতে হয়, গণতন্ত্রের কথাও শুনতে হয়, ন্যায় বিচারের কথাও শুনতে হয়। সেটা আমার কাছে খুবই অবাক লাগে।”

বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন, সংগ্রামমুখর জীবন ও কারাগারে অন্তরীণ দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। শেখ হাসিনা বলেন, “আমি হিসাব করে দেখি, আমি তো মানে বাবাকে বাবা বলে ডাকা, যে বয়সে একটা বাচ্চা বাবার হাত ধরে স্কুলে যায় সেই সুযোগটা আমাদের জীবনে কমই এসেছে, আসেনি বলতে গেলে।”

দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায় সরকার

দেশে কলঙ্কিত ঘটনার উদাহরণ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার কখনও বিচার বিভাগতে কলঙ্কিত হতে দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বিচারকার্যে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি। এর আগে অনেক ঘটনা আছে, আপনারা জানেন। দেখা গেছে, ফলস (ভুয়া) সার্টিফিকেটের ব্যবহার, ছাত্রদলের কাঁধে হাতে রেখে কাকে কী রায় দেয়া হবে, সেই আলোচনা। এ রকম বহু ন্যক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। অথচ আমরা ন্যায়ের পথে যেন সবাই চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছি।

এ সময় বিচারিক আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত অনুবাদ শাখা খুলে আদালতের রায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশে বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর মধ্য দিয়ে দেশের সবার পক্ষে রায় পড়া সহজ হবে।”

Link copied!