• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

দাম বাড়ার খবরে প্যাকেটজাত চিনি উধাও


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩, ০৮:৪৬ এএম
দাম বাড়ার খবরে প্যাকেটজাত চিনি উধাও

রাজধানীর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনিরও সংকট। তার সঙ্গে বেড়েছে দাম।  

শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁও , কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায় তেজগাঁও এলাকায় ১৫০ টাকা ও কারওয়ান বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দামে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি প্যাকেটজাত চিনি।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মিজান বলেন, “খোলা চিনি আছে, কিন্তু প্যাকেটজাত চিনি নাই। কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না। খবর পাচ্ছি দাম বাড়ার পর ১৬৫ টাকা প্যাকেট করে বাজারে আসবে। তখন আমরা পেলে বিক্রি করব।”

খোলা চিনি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, “গতকাল ৫০ কেজি বস্তা ৬৭০০ টাকায় এনেছি, আজকে ৬৯০০ টাকাতেও দিচ্ছে না। এই দামে এনে লেবার খরচ বা অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি।”

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পর গত মাসের শুরুর দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির খুচরা মূল্য কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ানোর অনুমতি দেয়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে গত এক বছরে চিনির দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

চিনির সংকটের কারণ হিসেবে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারা, আমদানিতে শুল্ক বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন মিলাররা। আর এজন্য বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ দেশের বাজারে চিনির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ার এক মা জেনারেল স্টোরের মালিক বলেন, “চিনি রাখি না। আগে যখন দাম কম ছিল তখন বিক্রি করতাম। এখন এতো দামে চিনি বিক্রি হয় না। আবার দাম নিয়ে কাস্টমারের সঙ্গে ঝামেলা হয়। তাই রাখি না।”

একই কথা বললেন কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের মালিক মনোয়ার। তিনি বলেন, “কাস্টমারের সঙ্গে দাম নিয়ে ঝামেলা হয়। আবার বেশি দাম দিয়ে আনলেও স্লিপ দেয় না পাইকারি বিক্রেতারা। তখন ভোক্তা অধিকার থেকে লোক এলে জরিমানা করে। তাই চিনি বিক্রি ছেড়ে দিছি।”

দাম বেশি কেন জানতে চাইলে হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মিজান বলেন, “দেশি চিনি তো খুচরা বাজারে নাই। তাই বাজারের সব চিনিই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তখন আমদানীকারকরা দাম বাড়ায়। কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণেই দাম বাড়ছে।”

তবে কিছুটা ভিন্ন কথা বলছেন পাইকারি বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি দোকান মেসার্স সিদ্দিক বলেন, “চিনির কোনো ঘাটতি নাই। সরবরাহ আছে কিন্তু দামটা একটু বেশি। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে দাম বেশি আবার দেশে আনতে খরচও বেশি পরে যায়। তাই দাম বেশি।”

দাম বাড়ার কথা অস্বীকার করে পাইকারি বিক্রেতা আমিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বাবলু বলেন, “দাম তো গত অক্টোবর থেকেই বাড়ছে। এখন আর বাড়ে নাই। খুচরা বাজারের বিক্রেতা দাম বাড়ার খবরের সুযোগ নিচ্ছেন।”

পাইকারি বিক্রি ছেড়ে দিয়েছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, “গত বছর ১৬ টন চিনি আনতে খরচ হয় পৌনে ৭ লাখ। আর এখন ২১ লাখ টাকা। এই দামে এনে বিক্রি করতে গেলে ভোক্তা অধিকার এসে জেল জরিমানা করে। তাই পাইকারি বিক্রি ছেড়ে দিয়েছি।”

মূল্যস্ফীতির এই বাজারে যখন সব কিছুর দামই বাড়তি তখন দফায় দফায় চিনির দাম বাড়ায় বিপাকে ক্রেতা।

কারওয়ান বাজারে ঈদের বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, “গত বছর যে সময় চিনি ছিল ৭০-৮০ টাকা। আর এখন দ্বিগুণ। বেতন তো বাড়ে নাই। বাজার করতে এসে টাকার দিকে দেখে অসহায় লাগে।”

Link copied!