অমর একুশে বইমেলায় এসেছে মৃত্যুঞ্জয়ী অনেক সাহিত্যিকের চিরায়ত সব বই। পাঠকের কাছে পছন্দের তালিকার প্রথম দিক থেকেই রয়েছে এসব বই।
এছাড়া বইমেলা চিরসবুজ হয়ে আছে চিরায়ত এসব সাহিত্য দিয়ে। কারণ চিরায়ত সাহিত্যের জয়জয়কার সব সময়। পাঠক ও দর্শনার্থীও খুশি তাদের পছন্দের বই পেয়ে। যদিও এ ধরনের বই প্রকাশনার মান নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বইমেলায় এসেছেন আবৃত্তিশিল্পী রশিদ কামাল। কবিতার বইয়ের পাশাপাশি গল্প-উপন্যাস পড়া হয় তার। অবসর সময়ে এই বই তার সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের আগামী প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা।
রশিদ কামাল বলেন, “কবিতার মানুষ বলেই আমার কবিতার বই বেশি পড়া হয়। আজ রবি ঠাকুরের ‘কাব্যকর্মী’ উপন্যাসটি সংগ্রহ করলাম। সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে আমাদের চিরায়ত এই সাহিত্যগুলো। তাই সুযোগ পেলেই আমি পড়তে বসি।”
এদিকে মেলাপ্রাঙ্গণে পুতুলনাচের ইতিকথা খুঁজছেন আনিকা তাবাচ্ছুম। লালমাটিয়া মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা।
পাঠ্যবই হওয়া সত্যেও বইটি কেনার কারণ জানতে চাইলে আনিকা বলেন, “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ আমার সংগ্রহে আছে। আর এই বইটি কিনেছি আমার বন্ধুর জন্য।”
এছাড়াও অবসর প্রকাশনীতে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই। এরই মধ্যে প্রকাশনা সংস্থাটি চার খণ্ডে প্রকাশ করেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসসমগ্র। অবসর আরও এনেছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দুর্গেশনন্দিনী' ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অরণ্য-বহ্নি'। প্রকাশনীতে স্থান পেয়েছে ১৫০টির অধিক চিরায়ত সাহিত্যের বই।
চিরায়ত সাহিত্য প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে অবসর প্রকাশনীর কর্ণধার নূর-ই-মুনতাকিম আলমগীর বলেন, “কোনও লেখকের মৃত্যুর পর ৬০ বছর পেরলে তার বইয়ের কোনও কপিরাইট থাকে না। তখন যে কেউ চাইলেই বই ছাপতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বইয়ের মান গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা চিরায়ত সাহিত্যের বইগুলো যত্নের সঙ্গে ছাপিয়ে থাকি।”
বই বিক্রির ক্ষেত্রে চাহিদার কোনও কমতি নেই জানিয়ে সংস্থাটির কর্ণধার আরও বলেন, “নতুন আসা বইয়ের চেয়েও চিরায়ত এসব সাহিত্যের আর হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের বিক্রি ভালো। মানুষের কাছে আজীবনের আবেদন এই মৃত্যুঞ্জয়ী সাহিত্যের।”
ঐতিহ্য প্রকাশনী এবারের মেলায় এনেছে জীবনানন্দ দাশের রচনাবলির ষষ্ঠ খণ্ড, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলির দশম খণ্ড ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলির দশম খণ্ড। জীবনানন্দ দাশের চারটি উপন্যাস 'বিভা', 'মাল্যদান', 'কল্যাণী' ও 'জলপাইহাটি'ও প্রকাশ করেছে এই প্রকাশনী। কয়েক বছর আগে ৩০ খণ্ডে রবীন্দ্র-রচনাবলি প্রকাশ করে ঐতিহ্য। প্রকাশনা সংস্থাটির ২৭টি চিরায়ত সাহিত্যের মধ্যে এখন আছে ২৫টি।
চিরায়ত সাহিত্যের প্রতি পাঠকের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে বিক্রয়কর্মী রানা আহমেদ বলেন, “চিরায়ত সাহিত্যের প্রতি-ই পাঠকের আকর্ষণ সর্বোচ্চ। তার মধ্যে এ বছর বেশি বিক্রি হয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু-হোটেল এবং আরণ্যক।”
পার্ল পাবলিকেশন্সে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান, সঞ্চয়িতা ও গল্পগুচ্ছ। তাছাড়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানকি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে বই। এসব বইয়ের প্রতি মানুষের একটা বিশেষ টান আছে বলে জানান বিক্রয়কর্মী স্মৃতি আক্তার।
কাকলী প্রকাশনীতে আছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী সব উপন্যাস। প্রতিটি বইয়ের বিক্রিই ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রয়কর্মী তানজিলা তাসনিম।
এছাড়াও বর্ণায়ন, উৎস, বুকস ফেয়ার, সালাউদ্দীন বইঘর, বিশ্বসাহিত্য ভবন, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, স্টুডেন্ট ওয়েজ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, পাঠক সমাবেশ, নভেল পাবলিশিং হাউস, জোনাকী, কালি ও কলমসহ শতাধিক প্রকাশনীর স্টলে ৬০ বছর আগে প্রয়াত লেখকের বই পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকে রচনাবলিও প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে সার্বিকভাবে চিরায়ত বই প্রকাশকে ইতিবাচকই মনে করছেন প্রকাশকরা।