• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অতঃপর একটি মৃত্যুর সুখবর


সোলায়মান সুমন
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ০৮:০৩ পিএম
অতঃপর একটি মৃত্যুর সুখবর

ঘুম ভেঙে গেলে ফরিদ বিছানায় বসে পড়ে। সে ঘামছে। বুকের কাছে চিনচিনে ব্যথা। পালস রেট নিশ্চয় ১৩৭-এর ওপর চলে গেছে। পাশে রাখা পানিটা খেল। দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকাল। সকাল ছয়টা। নিস্তেজ শরীরটাকে আবার বিছানায় এলিয়ে দিল। 
ঘুম ভাঙল আরিফের ফোনে। ‘কী রে রেডি হয়েছিস।’
না দোস্ত।
আরে বলিস কী!
আমরা তোর বাড়ির সামনে আসছি, দ্রুত রেডি হয়ে নিচে আয়।
ফরিদ ও ঘরে গিয়ে দেখে কনা আতঙ্কমাখা চোখে বসে আছে। ফরিদ জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে তোমার?
কনা নিশ্চয় কেঁদেছে কিছুক্ষণ আগে।
আরে কাঁদছ নাকি?
এই ট্রিপটা বাদ দাও।
কনার কথা শুনে ফরিদের মুখ-চোখ শুকিয়ে যায়। কেন? হঠাৎ কী হলো?
আমি স্বপ্নে দেখেছি আমাদের গাড়িটা পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছে। গাড়িটা নিচে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙে গেল।
এ কথা শোনার পর ফরিদ ঘামতে শুরু করেছে। তার স্বপ্নটাও খানিকটা এমনই ছিল, কিন্তু এখন এ কথা কনাকে বলা যাবে না। আজকের এই ট্যুরটা প্রায় ছয় মাস আগে প্ল্যান করা। বিমানের টিকিট অনেক আগে কাটা তাই সস্তায় পেয়েছিল। হোটেল বুকিং দেওয়া আছে। এতগুলো টাকা...শুধু স্বপ্নের কারণে ট্যুর বাতিল। এই যুগে এসে—মানুষ বলবে কী! নাহ। নানি বলতেন সকালের স্বপ্ন সত্যি হয়। তাছাড়া স্বপ্নটা দুজনেই দেখেছে। তাহলে বিষয়টা কাকতালীয় কীভাবে হতে পারে। কিছু টাকা নষ্ট হলে হোক। তাই বলে জীবনের ঝুঁকি নেওয়াটা কি ঠিক—না ঠিক হবে না। ফরিদ ভাবে, আরে আমি এসব কী ভাবছি! সামান্য স্বপ্নকে কেন এত সিরিয়াসলি নিচ্ছি? স্বপ্ন তো স্বপ্নই। অবচেতন মনের সমীকরণ এসব। পুরান ঢাকায় সে দেখেছে নন্দন বৈদ্য নামের এক ব্যক্তি গাছামো ওষুধ বিক্রি করত। সে বলত ওষুধটা তার দাদার দাদা স্বপ্নে পেয়েছিল। নন্দনকে সে জিজ্ঞেস করেছিল, এত দিনের পুরোনো স্বপ্ন—এখনো কাজ করে? উত্তরে সে বলে, বাবা, বিশ্বাস করলে ঠিক কাজ করবে, না করলে নয়। 
আপনি তো মানুষ ঠকাচ্ছেন?
বাবা, আমি তো কারও কাছে টাকা চাই না। কেউ খুশি হয়ে দিলে নিই, না দিলে নাই। কত নবী, পীর, পয়গম্বর স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমাজের কল্যাণে কাজ করেছেন। স্বপ্ন একেবারে ফেলনা না। তাই বলে এই যুগে এসে? সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিকসে মাস্টার্স করেছে। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কী করে সে এসবে বিশ্বাস করবে। ধুর। ফরিদ ব্যালকুনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। সামনের রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ কখন খলিলের পাজেরোটা এসে দাঁড়াবে! যদি গাড়িটা না আসে। রাস্তাতে বিকল হয়ে যায়। কিংবা গাড়ির তেল শেষ হয়ে যায়—সব পাম্প বন্ধ হয়ে যায় আকস্মিক ডাকা ধর্মঘটের কারণে। অথবা খলিল আবার ফোন দিয়ে বলে, দোস্ত যাওয়া ক্যানসেল। ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে হঠাৎ করোনা আবার বেড়ে যাওয়ার কারণে। এয়ারপোর্টে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার গোপন খবর আছে সরকারের ইন্টেলিজেন্ট ডিপার্মেন্টের কাছে। খলিল এমনও বলতে পারে, দোস্ত, আমার পরিবারের সবাই মনে হয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। সবার জ্বর, শুষ্ক কাশি, আমার বুকটা চেপে আসছে। ধুর! কী ভাবছে এসব ফালতু। কাছের বন্ধুর জন্য অমঙ্গল কামনা...না কোনো একটা খারাপ খবর তো আসবেই। কারণ এমনটিই হয়। ফরিদ অথবা কনা যদি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখে বিশেষ করে সকালে, তাহলে হয় কেউ মারা যায় অথবা আপনজনের কারও বাসায় চুরি হয়। তবে একবার ঘটেছিল অন্য ঘটনা। সকালে উঠে ফরিদ গোসল সেরে নাশতা করে অফিসের জন্য বের হচ্ছিল—ফরিদের শার্টের বুকের কাছের বোতাম খুলে কনা থুতু ছিটিয়ে দিল। আরে আরে কী করছ। গোসল করলাম কেবল আর তুমি থুতু দিয়ে আমাকে ভিজিয়ে দিলে।
কই থুতু দিলাম? শুধু থুতু দেওয়ার মতো ভান করলাম, যাতে তোমার ওপর বদ হাওয়ার নজর না লাগে। 
আরে এসব কী বলো? 
নাহ। আজ তোমার অফিস যাওয়া জরুরি, কাল তিন দিনের ছুটি হয়ে যাবে, তা না হলে যেতে দিতাম না। আমি খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি—তুমি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছ।
এ জন্য সকাল থেকে তোমার মুড অফ। আমি ভাবলাম কী না কী হয়েছে তোমার। কী এমন বললাম যে সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে রেখেছ?

সেদিন সত্যি! অফিসে যাওয়ার সময় শাঁই করে একটা মোটরসাইকেল নাক বরাবর তীক্ষ্ণ বাতাস ছড়িয়ে সামনের সিটি করপোরেশনের ময়রার স্তূপের ওপর গিয়ে পড়ে। মোটরসাইকেলের চালক একজন কিশোর। সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। যাক সামান্যর জন্য ফরিদ বেঁচে গেছিল। ফরিদের হাঁটার গতি এক সেকেন্ড  বেশি থাকলেই সে গেছিল! হাত-পা ভেঙে সরাসরি হাসপাতালে...হয়তো সেদিন কনার থুতুর জোরেই সে বেঁচে বাড়ি ফিরেছিল।

কিছু তো একটা ঘটবেই আজ, যেহেতু দুজনেই স্বপ্নটা দেখেছি। সে যা-ই হোক, বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার বাইরেও অনেক কিছু আছে। হয়তো একদিন বিজ্ঞান তার ব্যাখ্যা করতে পারবে বা আজকের যে ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিচ্ছে, সেটা বদলে যাবে। ফরিদ তিনতলার ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালাতে থাকে একটার পর একটা আর অপেক্ষা করে—খলিলের পাজেরোটা এলো বলে। ফরিদ সিগারেটটা শেষ করে আবার ঘরে যায়। কনাকে বলে, আরে এভাবে বসে আছ কেন? রেডি হও। এত ভয় পেলে তো জীবন চলবে না। রাতে এইচবিও-তে সিনেমা দেখলে না ‘If I stay’। তাই এমন স্বপ্ন দেখেছ। ও নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা যা ভাবি স্বপ্নে তাই আসে। কনা উঠে চোখে পানি দিয়ে বেরোনোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে আর ফরিদ নরম পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আবার ব্যালকুনিতে যায়। কিন্তু সেখানেও বেশিক্ষণ দাঁড়ানো হয় না। তেরো বছরের কন্যা রুনা এসে বলে, বাবা, তুমি এখনো রেডি হওনি? তুমি না বললে ছটায় বেরোবে এখন তো সাতটা বেজে গেছে।
ফরিদের ধর্মের প্রতি বিশ্বাস ততটা মজবুত না হলেও আজ ফ্লাইট টেকআপের সময় পুরোনো স্মৃতি থেকে দোয়া ও সুরাগুলো হাতড়ে বের করে মনে মনে আওড়াতে থাকে। রুনার হাতটা শক্ত করে ধরে—মুখে যদিও হাসিটা ছড়িয়ে রাখে। যাক, ঠিক মতো টেক অফ করে ফ্লাইটটা। কেবিন ক্রুর দেওয়া আপদকালীন নির্দেশনাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে। মেয়েকে বুঝিয়ে দেয়। পেছনের সিট থেকে মাথায় সামান্য টোকা দিয়ে খলিল বলে, তোর হয়েছেটা কি না। যাত্রার শুরু থেকে তোকে মনমরা মনে  হচ্ছে? আরও অনেক কিছুই বলে খলিল কিন্তু কানে ঝাপ লেগে থাকার কারণে ফরিদ সবটা শুনতে পায় না।
নাহ, তেমন কিছু না। বলব পরে।
খলিল ও ফরিদ তাদের পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর দেখে তাদের রিসিভ করার জন্য একটা সায়েস গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তারা সেই গাড়িতে চড়ে বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেয়। ফরিদ বলে, গাড়ি কি আগেই ভাড়া করে রেখেছিলি নাকি?
আরে নাহ, আমার এক বন্ধু—রাঙামাটিতে  সে একদিন আগেই চলে এসেছে। সেই গাড়ির বন্দোবস্ত করেছে।
আমি তাকে চিনি?
নাহ, তুই চিনবি কী করে, ও তো আমাদের এলাকার বন্ধু। সে থাকে কানাডায়। এসেছে কদিন আগে রাঙামাটিতে আসার প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিল। দারুণ মিশুক, আড্ডাবাজ তোর ভালো লাগবে।

ঘণ্টাখানেক গাড়ি চলার পর গাড়ি একটা মোড়ে এসে দাঁড়াল। এখানে গাড়ি দাঁড়াল কেন? ফরিদ জিজ্ঞেস করে?
খলিল বলে, হেলাল এখান থেকেই উঠবে।
হেলালটা আবার কে?
আরে তোকে বললাম না আমার বন্ধু। কানাডাপ্রবাসী।
ও নাম তো বলিসনি। 
ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরের এক ব্যক্তি গাড়ির জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। হায়, কেমন আছেন আপনারা? অদ্ভুত পোশাক পরা লোকটি মাথা থেকে কাউবয় হ্যাটটা নামাল। লোকটির পরনে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। স্লিভলেস টি-শার্ট।
খলিল বলে, এই তো আমাদের হেলাল। আয় দোস্ত। গাড়ির সামনের ড্রাইভারের পাশের সিটটা খালি করে দিয়ে খলিল পেছনে এসে তার বউ-বাচ্চাদের সঙ্গে বসল।
হেলাল বলে, আপনাদের কোনো সমস্যা হয়নি তো।
না না, সমস্যা কেন হবে। ফরিদ বলে। হেলাল সাহেবের চোখ দুটো ভীষণ লাল হয়েছিল। হয় সে রাত জেগেছে, না হয় প্রচুর ড্রিংকস করেছে। পোশাক, চুলের হেয়ার স্টাইল, কথা বরার ধরন দেখে ফরিদ অনেকটাই নিশ্চিত লোকটা অল্প সময়ে অনেক ডলার কামিয়েছে এবং প্রচুর ড্রিংকস করে। আরেকটা বিষয়, লোকটি খুব সম্ভব বিয়ে করেননি এবং বেহিসাবি জীবন যাপন করে। ফরিদ জিজ্ঞেস করে, হেলাল ভাই, আপনি কি বিবাহিত।
আরে না ব্রাদার, বিয়ে করতেই তো এসেছি। আপনার কথা খলিলের মুখে শুনেছি বেশ কয়েকবার। গত বছর ডিসেম্বরে খলিলের পরিবারের সঙ্গে আপনার পরিবার কক্সবাজার গিয়েছিলেন। ফেসবুকে আপনাদের ছবি দেখেছিলাম। কনা ভাবি তো দেখছি ফেসবুকের চেয়ে বাস্তবে আরও অনেক বেশি সুন্দর। ফরিদ অবাক হয় তার স্ত্রীর নাম পর্যন্ত জানে সে!  কোনো পুরুষ কনার রূপের প্রশংসা করলে ফরিদ খুশি না হয়ে আরও বিরক্ত হয়।  সে চুপ করে যায়। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ দিয়ে গাড়িটা এগিয়ে চলেছে। ভয়ে ফরিদের পায়ের নিচটা কেম শিরশির করছে। কনা চুপচাপ বসে আছে। তার মনের অবস্থাও যে ভালো নেই, সেটা বোঝা যায়। যদিও সে নিজেকে একেবারে শান্ত রেখেছে। রাস্তাটা ভীষণ সরু—পাশাপাশি যখন দুটো গাড়ি ক্রস করছে, গাড়িটা একবারে রাস্তার কিনারে চলে আসছে। ফরিদের বুকে ধড়ফড়ানি বেড়ে যাচ্ছে। কী যে হবে!
হঠাৎ করে একটা ঘটনা ঘটে যায়। হেলাল বলে, আরে ড্রাইভার সাব, কী গাড়ি চালাচ্ছেন? এত ধীরে! এমন করলে হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। হোটেলে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে পাহাড়ে সূর্যাস্ত দেখতে যাব আমরা সে সময় তো আর থাকবে না।
থাক না আসতে চালাক। যে উঁচু-নিচু রাস্তা!
তাতে কী। ও তো এই এলাকার ড্রাইভার, রাস্তা তার পরিচিত। কি ড্রাইভার ঠিক না?
ড্রাইভার বলে, নাহ। সত্যি বলতে কি, আমি চট্টগ্রাম শহরেই এত দিন ড্রাইভ করতাম। একজন ব্যবসায়ীর পার্সোনাল গাড়ি চালাতাম। দুই মাস হলো এই হোটেলে জয়েন করেছি। তবে মাঝে মাঝে এসেছি এই পথে।
আরে মিয়া আপনি গাড়ি থামান, আমি চালাব।
বলে কী! বলে কী! আপনার চালানোর দরকার নাই। উনি চালাক, কাজ নেই সূর্যাস্ত দেখে। পাছে নিজের জীবনের সূর্যাস্ত হয়ে যায়।
আপনি তো জানেন না আমি কেমন গাড়ি চালাই। আজ দেখবেন। কারও কোনো কথায় কান না দিয়ে হেলাল ড্রাইভারের সিটে গিয়ে বসে। ফরিদ ভাবে, আজ তাহলে শেষ! পকেট থেকে হেলাল একটা বিদেশি ক্যান্ডি বের করে দেয়। চকলেট খেলে ঘুম আসে না শরীর চাঙা থাকে। দোস্ত, আমার লাল হ্যান্ড ব্যাগটাতে অনেক চকলেট আছে। হেলাল এ কথা বলে গাড়ির গতি আশি উঠিয়ে দেয়। এই রুটে আশিতে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ।
আরে ভাই, এত গতিতে গাড়ি ওঠাচ্ছেন কেন?
আপনি ভয় পাইয়েন না। আমি কানাডাতে গাড়ি ড্রাইভ করি, কোনো দিন জরিমানা খাইনি।
ভাই এটা কানাডা না বাংলাদেশ। আর এই পাহাড়ি রাস্তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। 
গাড়ি চলতে থাকে। চলতে থাকে। ফরিদের বুকের ধুঁকধুঁক বাড়তে থাকে। হঠাৎ একটা গাড়ি খুব কাছে চলে এলে হেলাল জোরে ব্রেক কষে। গাড়িটা পাহাড়ের কিনারে এসে দাঁড়িয়ে যায়। ফরিদ আর কনা অনুভব করে পায়ের নিচে যেন কিছু নেই—শূন্যে ভাসছে তারা। এক মুহূর্ত পর তাদের লাশ পাহাড়ের পাদদেশে পাওয়া যাবে। মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ বসে থাকে। হেলাল গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির অবস্থানটা নিরীক্ষণ করে। তারপর বলে, সবাই নেমে আসেন। গাড়িটা একটু ঠেলা দিয়ে সামনে নিতে হবে তারপর স্টার্ট দেব। সবাই নামল। ফরিদ, ড্রাইভার আর খলিল পেছন থেকে ঠেলা দিল। হেলাল জানালা দিয়ে হাত গলিয়ে স্টিয়ারিংটা ধরে থাকল। গাড়িটা নিরাপদ জায়গায় আনার পর সবাই উঠে বসল। খলিল বলল, দোস্তা আমার, তুই ড্রাইভারের পাসে এসে বস। ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে দে।
ঠিক আছে ঠিক আছে। আমি আর ড্রাইভ করব না। তোরা খামোখাই ভয় পেয়েছিস। দুর্ঘটনা ঘটতে পারত কিন্তু ঘটেনি তো। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ফারাক কতটুকু? খুবই সামান্য। তাই মরার আগে মরে থাকার দরকার নাই।
ফরিদ এবার কনার দিকে তাকাল। সে ভীষণ রেগে আছে। ভয় পেয়েছে নিশ্চয়। গাড়ি এবার ড্রাইভার চালাচ্ছে। অত্যন্ত সাবধানী সে। যাক। 
একটা ফোন এলো কনার ফোনে। হ্যালো, ও হাসান। কী ব্যাপার ভাই। ভালো করে শোনা যাচ্ছে না। নেটওয়ার্ক খুবই খারাপ।...তোমার সঙ্গে কথা বলবে। ফোনটা ফরিদের দিকে এগিয়ে দেয় কনা।
কে? ফোনটা ধরতে ধরতে ফরিদ বলে।
 তোমার ছোট ভাই, হাসান।
ও। হ্যালো, হাসান?
ভাই, তোমরা কি রওনা দিয়েছ?
এই তো পৌঁছে গেলাম বলে। কেন কী হয়েছে?
হারেস চাচা তো মারা গেল। ঘণ্টাখানেক আগে। আমাদের বংশের মাথা চলে গেল।
ইন্না লিল্লাহি...। আহা! আমার থাকাটা তো খুবই জরুরি ছিল।
সেটাই তো জানাজার সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি তুমি যদি আসতে পারো তো ডিলে করতে বলি। নারে এখান থেকে পৌঁছানো অনেক সময়ের ব্যাপার। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা।
তাহলে?
এখন তেকে দোয়া করব। হোটেলে পৌঁছে ভিডিও কল দিব। সবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দিস।
আচ্ছা।
ফরিদ কলটা কেটে দিয়ে বুকে হাত দেয়। বুক থেকে যেন একটা ভারী পাথরের চাপ কেউ নামিয়ে দিল। যাক ফাঁড়া কাটল। কনার দিকে তাকিয়ে বলল, হারিস চাচা মারা গেছে। এবার সে ড্রাইভারের দিকে তাকাল, এই ড্রাইভার সাব। আরেকটু গতি বাড়ান। নীল আঁচলে সূর্যাস্তটা আজ আর দেখা হবে না মনে হয়!

Link copied!