• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

দৌড়


জিললুর রহমান
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২১, ০৬:০০ পিএম
দৌড়

দৌড় একটা সংক্রামক ক্রিয়া। যখন তটস্থ কেউ ভীত দৌড়ায়, চারপাশের সবার মধ্যে সঞ্চারিত হয় ভয়। তারপর দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য সকলে দৌড়ায়, জানে না, জানতে চায় না, কেন, কী কারণে এই দৌড়। তারপর একসময় সকলেই ভুলে যায় দৌড়ে কে প্রথম হয়েছে কিংবা প্রথম কে দৌড় শুরু করেছে। সব দৌড় প্রতিযোগিতার নয়, কিছু কিছু ভীতযোগিতারও। 

২.
আমরা শৈশবে বেহুদা দৌড়েছি, বাবার মারের ভয়ে, পাড়ার জাঁদরেল মুরব্বির ভয়ে, মিউনিসিপালিটির টিকাদিদির ভয়ে…
দৌড়াতে দৌড়াতে বেয়ে উঠেছি সুউচ্চ সুপারিগাছ, দেয়াল টপকে পালিয়েছি মনিরদের বাসার পেছনে।

শৈশব মানেই দৌড়, কখনোবা পুকুরে লাফাব বলে। এখন বার্ধক্যে দেখি দৌড় চলছে অনন্তকাল——জীবনের দৌড়, জীবিকার দৌড়, অর্জনের দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে এলেও ফরেস্ট গাম্পের মতো কদর করে না কেউ। কেমন চোরের মতো মনে হয়, দৌড়ে যাচ্ছি জীবনের কাছে ধরা পড়ে যাব বলে…

৩.
ইশকুলে বার্ষিক প্রতিযোগিতা জিনিসটা দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া দরকার। এখানেই প্রথম জেনেছি সহপাঠীরা বন্ধু নয়, শত্রু-প্রতিযোগী-প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপর ক্লাস টেস্ট কিংবা বার্ষিক পরীক্ষায় মৃত্যুঞ্জয় আমাকে ডিঙিয়ে প্রথম হলেই বাবা রেগে কাঁই। আমিও দিলাম ভোঁ দৌড়—পালাই পালাই। 
আর সেই মৃত্যুঞ্জয় যখন পরীক্ষার খাতা শূন্য রেখে মৃত্যুর কাছে পরাজয় মেনে নেয়, তখনো কি আমি তার সঙ্গে পেরেছি প্রতিযোগিতায়? সে আমার ঢের আগে পৌঁছে গেল জীবনের শেষ সীমানায়…

৪.
দৌড়ে যাচ্ছি রাস্তা পেরোতে, দৌড়ে যাচ্ছি গাড়িটা ধরতে, দৌড়ে যাচ্ছি ব্রিজের ওপরে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে। দৌড়ে চলেছি ধরতে সময়, মনের ভেতর টম মরিসন। সময় ছুটছে পাগলপারা—আমরা কেবল দৌড়ে সারা।

৫.
চন্দ্র ছুটেছে মাসকাবারি, পৃথিবী ছুটেছে বছর গড়াতে, সূর্য কেবল মিল্কি পথে দুলকি চলেছে নিজের খেয়ালে। দৌড়ে সবাই যে যার গতিতে, মাপছি কেবল আলোককণার। কৃষ্ণবিবর হা করে আছে আসবে কখন আলোর কুমার—কখন সে কোন আলোকতারকা হারায় গহিন অন্ধকারে। আমরা তবু অনন্তকাল ছুটছি হুদাই কার খেয়ালে…

৬.
দৌড়ে ভীষণ নাম করেছে কোভিড এবং টম মরিসন। মানুষের গতি বাতাসের সঙ্গে যুদ্ধ করেই এগিয়ে যাওয়ার। ভাইরাস ছোটে বাতাসের বেগে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে উড়ে। ভাইরাস খুব নাম করেছে আজ মানুষের ঘরেদোরে। মানুষ জানে না, জান বাঁচাতেই ছুটছে কোভিড—মানুষের বুকে ঠাঁই গড়ে নিলে জমে ওঠে তার কোরবানির ঈদ।

৭.
একদিন আমার পায়ের সামনে চকচকে ফুটবল এসে থামবে। সামনে গোলপোস্টে গোলী উধাও। চাইলেই দৌড়ে গিয়ে এক লাথিতেই গোল করা যায়। কিন্তু আমার সমস্ত আগ্রহ ফেলে দিয়ে এসেছি বঙ্গোপসাগরে। আমি আর দৌড়াব না ফুটবলের পেছনে। তোমরা একে পরাজয় বলবে, আমি অনুভব করব পরম বিজয়। 

৮.
ভোকাট্টা ঘুড়ির পিছে দৌড়ে যাচ্ছি সুতোটি ধরার জন্য আজীবন। সময় উড়ে গেল বাতাসের মতো, আর জীবন লটকে থাকল আকাশের কার্নিশে। কেবল আমিই হোঁচট খেয়ে পড়েছি নর্দমায়।

Link copied!