গুপ্তধন নিয়ে যেমন প্রাচীনকালে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ কাজ করত, সেই আগ্রহ বর্তমান সময়ে এসেও সামান্য কমেনি। গুপ্তধনের সন্ধানে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিতীয়বার ভাবেনি। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ কিংবা আলীবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্পের মতো নিজের জীবনকে পরিবর্তন করার চেষ্টা মানুষ কম করে না। বর্তমান সময়ে এসে পিরামিডের মধ্যেও গুপ্তধনের সন্ধানে মানুষ থেমে থাকেনি। পিরামিডের প্রবেশমুখে খোদাই করা অভিশাপের ফলে অনেকের নির্মম মৃত্যু হয়েছে এমন গল্পও বেশ প্রচলিত।
কানাডার ওক দ্বীপ, যা ৫৫ হাজার ২৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। গুপ্তধন অনুসন্ধানকারীদের কাছে খুবই পরিচিত এই দ্বীপে এসে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। দ্বীপটির মাঝামাঝি অবস্থানে আছে একটি বিশাল গর্ত। এই গর্ত ‘মানি পিট’ নামে পরিচিত। এই মানি পিটের অর্থ ‘সম্পদে ভরা গর্ত’। ১৯ শতক থেকে অনেক অভিযাত্রী ও গবেষক গুপ্তধন উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সেই গুপ্তধনের সন্ধান পাননি কেউ।
বলা হয়ে থাকে, ওক দ্বীপের রহস্যময় গুপ্তধনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভিশাপ। সাতজনের মৃত্যু হলেই উদ্ধার করা যাবে গুপ্তধন। মানি পিট গর্তের সন্ধান প্রথমে পেয়েছিল ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস নামের এক স্থানীয় কিশোর। দ্বীপের ওক গাছের নিচে সে একদিন রহস্যজনক গর্তমুখ দেখতে পায়। খুব কৌতূহলী হয়ে ড্যানিয়েল গর্ত বরাবর মাটি খুঁড়তে শুরু করে। কিছু দূর খোঁড়ার পর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে কাঠের বাক্স, পাথরের স্ল্যাবসহ বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন। এই কথা অল্প সময়েই প্রচারিত হয়ে যায় লোকমুখে। পরবর্তীকালে এই গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সিমেন্টের তৈরি ভল্ট, পার্চমেন্ট কাগজের পুঁথি। পরীক্ষা করে জানা যায় এগুলো ১৬ শতকের নিদর্শন।
১৮ শতকের শুরুর দিকে ওক দ্বীপের গুপ্তধন নিয়ে নতুন করে চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেন স্কটিশ জলদস্যু ক্যাপ্টেন কিড। তিনি বলেন, ওক দ্বীপে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুকানো আছে। এরপর থেকে গুপ্তধন অনুসন্ধানীরা যেন আরও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। কখনো ব্যক্তিগতভাবে, আবার কখনো অনেক সংস্থা গুপ্তধন খুঁজেছে। তবে যতবার গর্ত খোঁড়া হয়েছে, ততবার সমুদ্রের নোনা জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে গর্তটি। অনেকের ধারণা গর্তটি ইচ্ছা করেই খুঁড়ে সমুদ্রের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো হয়েছে যাতে করে কেউ গুপ্তধন পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে।
তবে আশ্চর্যজনক এই গর্ত নিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি আসলে গুপ্তধনের কোনো গর্ত নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক সিংক হোল। তাই এখানে গুপ্তধন থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এই কথা গুপ্তধনে বিশ্বাসী মানুষেরা মানতে নারাজ। তারা বিশ্বাস করেন এখানে অনেক সম্পদ লুকানো আছে এবং একদিন না একদিন তারা এটি খুঁজে পাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :