• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

এখনও সাগরের নিচে রহস্যে ঘেরা মহাদেশ জিল্যাণ্ডিয়া


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২১, ১২:২৭ পিএম
এখনও সাগরের নিচে রহস্যে ঘেরা মহাদেশ জিল্যাণ্ডিয়া

বিশ্বের বুকে রয়েছে বিরাট এক মহাদেশ। যা এখন রয়েছে সাগরের পানির নিচে। এর নাম জিল্যাণ্ডিয়া। যার আয়তন ১৮ লাখ ৯০ হাজার বর্গমাইল। রহস্যে ঘেরা এই মহাদেশের আবিস্কারক ছিলেন স্কটিশ প্রকৃতিবিদ স্যার জেমস হেক্টর।

১৮৯৫ সালে নিউজিল্যাণ্ডের দক্ষিণ উপকূলবর্তী কয়েকটি দ্বীপ জরিপে সফরে গিয়েছিলেন জেমস হেক্টর। তিনিই প্রথম জিল্যাণ্ডিয়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পান।

এর আগেও এই মহাদেশের প্রমাণ পান ডাচ নাবিক আবেল টাসমান। ১৬৪২ সালে টাসমান নিশ্চিত করেছিলেন, দক্ষিণ গোলার্ধে এক অনাবিষ্কৃত বিশাল মহাদেশ আছে। ওই বছরই ১৪ আগস্ট তিনি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে পশ্চিমে, এরপর দক্ষিণে গেলেন। দক্ষিণে বসতি স্থাপনকারী মাওরি জনগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হয় টাসমানের। মাওরিরা ইউরোপিয়ানদের ছোট নৌকা ডুবিয়ে দেয়। ৪ ইউরোপিয়ান নিহত হন। টাসমান এই অভিযানে ওই জায়গাটার নাম দেন "মুরডেনের্স বে"। যার অর্থ খুনীদের উপসাগর।

টাসমান বিশ্বাস করতেন, সেই বিরাট দক্ষিণাঞ্চলীয় মহাদেশটি নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে। এখন যার নাম অস্ট্রেলিয়া। তবে ইউরোপিয়ানরা জানিয়েছিল, এটি তাদের কল্পিত সেই বিশাল দক্ষিণাঞ্চলীয় মহাদেশ নয়। এর বাইরেও আরও একটি মহাদেশের রয়েছে। টাসমানের সেই ধারনাই সঠিক ছিল। নিখোঁজ এই মহাদেশ সত্যিই আছে। যার নাম জিল্যাণ্ডিয়া।

জিল্যাণ্ডিয়াপ্রায় ৫৫ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া প্রাচীন সুপার-কন্টিনেন্ট গোণ্ডওয়ানা-র অংশ। সাড়ে ১০ কোটি বছর আগে জিল্যাণ্ডিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে। যার কারণ এখনো অজানা। সরু আকারের এই মহাদেশটি সাগরে ডুবে গিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়।

ভূতত্ত্ববিদরা জানান,সরু ও নিমজ্জিত হওয়া এটি একটি মহাদেশ। যার প্রমাণ দিচ্ছে শিলার প্রকৃতির গঠন। কারণ কন্টিনেন্টাল ভূ-স্তর প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীর হয়। এতে গ্রানাইট, শিস্ট এবং চুনাপাথর জাতীয় শিলা থাকে।

১৯৬০-এর দশকে ভূতত্ত্ববিদরা জানান, এমন একটি ভূতাত্ত্বিক অঞ্চল রয়েছে যা বিশাল ও উঁচু। যাতে নানারকম শিলার উপস্থিতি থাকবে। যার উপরের স্তর হবে পুরু।

১৯৯৫ সালে আমেরিকান ভূ-পদার্থবিদ ব্রুস লুইয়েনডাইক এই মহাদেশকে জিল্যাণ্ডিয়া নামে ডাকার প্রস্তাব দেন।

কেন এই মহাদেশটি সাগরে তলিয়ে যায় কিংবা এটা কখনো পানির ওপরে ছিল কিনা তা এখনও রহস্যে ঘেরা।

ভূতত্ত্ববিদরা জানান, উপগ্রহ প্রযুক্তি থেকে পাওয়া উপাত্তে এই মহাদেশের প্রমান পাওয়া গেছে। উপগ্রহ থেকে সমুদ্রের তলার ভূপ্রকৃতির যে বিশদ মানচিত্র তৈরি হয়েছে তাতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে জিল্যাণ্ডিয়া। আকারে যা প্রায় অস্ট্রেলিয়ার সমান বড়।

২০১৭ সালের জরিপের প্রধান ভূতত্ত্ববিদ নিক মর্টিমার বলছেন, "ব্যাপারটা সত্যি অন্যরকম। পৃথিবীর অন্য সব মহাদেশেই অনেকগুলো দেশ আছে। কিন্তু জিল্যাণ্ডিয়ায় আছে মাত্র তিনটি। এগুলো হচ্ছে নিউজিল্যাণ্ড, ফরাসী উপনিবেশ নিউ ক্যালেডোনিয়া, আর অস্ট্রেলিয়ার ক্ষুদ্র লর্ড হাউ দ্বীপ ও বল'স পিরামিড।"

প্রাচীন গোণ্ডওয়ানা সুপারকন্টিনেন্টের গাছপালা এখনো অস্ট্রেলিয়ার ডোরিগো বনভূমিতে পাওয়া যায় বলে জানান ভূতত্ত্ববিদরা।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জিল্যাণ্ডিয়া হয়তো একসময় সমুদ্রস্তরের ওপরেই ছিল। আড়াই কোটি বছর আগে নিউজিল্যাণ্ডের বর্তমান ভূখণ্ড ছাড়া বাকি সবটাই সাগরের পানিতে তলিয়ে গেছে।

তাদের ধারণা, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং বিরাট আয়তনের কারণে গোণ্ডওয়ানাতে প্রচুর উদ্ভিদ এবং চার পা বিশিষ্ট জন্তুসহ বহু প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। তার একটি ছিল অতিকায় টিটানোসর। নিউজিল্যাণ্ডে ১৯৯০ দশকে এবং ২০০৬ সালে অতিকায় তৃণভোজী ও মাংসাশী ডাইনোসরের দেহাবশেষ বা ফসিল পাওয়া গেছে। এগুলোর জীবনকাল গোণ্ডওয়ানা থেকে জিল্যাণ্ডিয়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। তবে জিল্যান্ডিয়ায় ডাইনোসর ঘুরে বেড়াতো কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

২০১৭ সালে ভূতাত্ত্বিক জরিপে ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে জিল্যাণ্ডিয়ার শিলার অভ্যন্তরীণ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই সময় মহাদেশটির মাটির ওপরের গাছের ফুলের রেণু থেকে শুরু করে উষ্ণ-অগভীর পানিতে বাস করে এমন প্রাণীর দেহকোষের নানা অংশ পাওয়া যায়।

ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রুপার্ট সাদারল্যান্ড বলছেন, "মাটির ওপরের গাছের রেণু পাওয়া যাওয়ায় মনে করা হচ্ছে, জিল্যাণ্ডিয়া হয়তো চিরকাল পানিতে ডুবে ছিল না।

'জিল্যান্ডিয়া' আবিষ্কারক দলটির একজন হচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জিএনএস সায়েন্সের ভূতত্ত্ববিদ অ্যাণ্ডি টালশ। তিনি বলেন, “বিশ্ব বুকে মহাদেশ মোট ৮টি। নতুন এই মহাদেশটি হচ্ছে সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে সরু। যারে ৯৪ শতাংশই পানির নিচে ডুবে আছে।

তিনি বলছেন "কোন কিছু চোখের সামনে থাকলেও যে তা উদ্ঘাটন করতে এতদিন লাগতে পারে - তারই এক দৃষ্টান্ত এটি।"

 

সূত্র: বিবিসি

Link copied!