• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

৫০ বছর ধরে ঘুমান না ভিয়েতনামের নিয়প!


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩, ০৩:১২ পিএম
৫০ বছর ধরে ঘুমান না ভিয়েতনামের নিয়প!

ভিয়েতনামের এক বৃদ্ধ গত পাঁচ দশক ধরে কখনোই ঘুমাননি। এই পাঁচ দশকে দিনে কিংবা রাতে কোনো সময়ই নাকি চোখের পাতা এক করতে পারেননি ৮১ বছরের তাই নিয়প। বছরের পর বছর ধরে না ঘুমিয়েও সুস্থ সবল রয়েছেন তিনি।

শান্তির ঘুম না থাকায় রাতের বেলাও ক্ষেতে গিয়ে হয় চাষবাস করেন, না হলে আকাশপানে চেয়ে বসে থাকেন। ইচ্ছে হলে কখনো নিজের বাগানের পরিচর্যায় লেগে পড়েন তিনি।

বুধবার (২৮ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। নিয়পের নিদ্রাহীনতার কারণ জানতে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তার নিদ্রাহীনতার ‘রহস্যভেদ’ করতে পারেননি তারা।

১৮ হাজার ৬৬৫ দিনের বেশি ঘুমাননি তিনি। কিন্তু এমনটা কি কখনো সম্ভব কিংবা কেউ কি এতদিন না ঘুমিয়ে বেঁচে থাকতে পারে? নিয়প যাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেন, সে জন্য তকে গান শোনানো হয়েছে। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে অন্য কোথাও তিনি ঘুমিয়ে কাটান কি না, তার সন্ধানে নজরদারিও করা হয়েছে। তবে পরিবার থেকে পাড়া প্রতিবেশী সকলেরই দাবি, নিয়প কখনো ঘুমান না!

ভিয়েতনামের কুয়াং নাম প্রদেশের এই বাসিন্দাকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ১৯৪২ সালে কুয়ো সন জেলায় তার জন্ম।

তিনি জানিয়েছেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় থেকেই ঘুমের ব্যাঘাত হত। যুদ্ধকালে রাজনৈতিক বা আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে ঘুম না হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। ফলে কিশোর বয়সে অনিদ্রা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না নিয়পের। তবে ১৯৭৩ সালের কোনো এক দিন থেকে তার দু’চোখ থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় ঘুম।

সংবাদমাধ্যমের কাছে নিয়পের দাবি, ৩১ বছর বয়সে তার এক বার ভীষণ জ্বর হয়েছিল। জ্বরে অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর ঘুমাতে পারেননি।

নিয়প বলেন, “সেই জ্বরের পর থেকে ঘুমানোর ইচ্ছাই করত না। জ্বর সেরে উঠলে চোখের পাতা এক করার চেষ্টা করেছিলাম। তবে আজ পর্যন্ত ঘুমের দেখা পাইনি। ৫০ বছর ধরে ঘুমাইনি। প্রথম দিকে ঘুমাতে না পারলে বেশ অস্বস্তি হত। তবে এখন সব সয়ে গিয়েছে। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারি। শরীরও বেশ সুস্থ। আজকাল আর ঘুমের স্বপ্ন দেখি না!”

রাতে বেশির ভাগ মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকেন, সে সময় নিয়প কী করেন?

উত্তরে তিনি বলেন, “শোবার ঘরে ঘুমন্ত স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে খুবই বিরক্ত লাগে। তাই প্রতি রাতেই ক্ষেতে চলে যাই।”

পেশায় দিনমজুর নিয়পের চাষের জমিও রয়েছে। রাতে কোদাল হাতে সেখানে গিয়ে চাষের কাজ সেরে রাখেন। নিজের বাগানে হরেক গাছ রোপণ করেছেন।

অনিদ্রার জেরে কার্যত ২৪ ঘণ্টাই কর্মক্ষম থাকেন নিয়প। নিয়পের এমন কাণ্ডের জেরে তার উপর নানা মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে নিয়প বলেন, “প্রতি বার হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা জানান, আমার কোনো রোগবালাই নেই। কখনো অসুস্থ হই না। ৫০ বছর ধরে এক মুহূর্তের জন্যও ঘুমাইনি।”

নিয়পের জীবন বেশ সাদামাটা। চারতলা বাড়ি হলেও ঘরে বিশেষ আসবাবপত্র নেই। শোবার ঘরে আসবাব বলতে কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার, কাঠের টেবিল আর একটি বিছানা। কম বয়সে গ্রামেরই একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। তবে প্রথম সন্তানের জন্মের সময় মৃত্যু হয় স্ত্রীর। বছর ছয়েক পর আবার বিয়ে করেন তিনি। দুই ছেলে এবং তিন মেয়েকে নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেই ঘরসংসার করছেন।

অনিদ্রা নিত্যসঙ্গী হওয়ার জেরে বার বার গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও এই পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট নন নিয়প। তিনি বলেন, “কী অদ্ভুত রোগ! খুব রাগ হয়। রাতের বেলা আকাশ পরিষ্কার থাকলে প্রায়শই ক্ষেতে গিয়ে কোদাল চালিয়ে বীজ রোপণের কাজ করি। আর পাঁচটা সাধারণ লোকের থেকে দ্বিগুণ কাজ করি। তবুও জীবন ঠিকঠাক চলছে না।”

চোখের ঘুম আনতে রাতের পর রাত মদ্যপান করে বা ঘুমের ওষুধ খেয়েও দেখেছেন বলে জানিয়েছেন নিয়প। তাতেই ঘুমের দেখা পাননি।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনিদ্রার জেরে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা নিত্যদিনের কাজকর্মে প্রভাব পড়ে। তবে নিয়পের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

দিনের পর দিন এ ভাবেই কাটানো নিয়পকে এক বার ভিয়েতনামের দা ন্যাং সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তবে সেখানে পরীক্ষানিরীক্ষায় তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি।

Link copied!