• ঢাকা
  • বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩০, ২২ রজব ১৪৪৬

‘ভিয়েতনামের মতো আফগানিস্তানেও পরাজিত যুক্তরাষ্ট্র’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১, ০৯:২৪ পিএম
‘ভিয়েতনামের মতো আফগানিস্তানেও পরাজিত যুক্তরাষ্ট্র’

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে একযোগে হামলা চালায় আল-কায়দা। এরপর আফগানিস্তান থেকে আল-কায়দাকে উৎখাতে তালেবান সরকারের পতন ঘটায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। গঠন হয় ন্যাটো সমর্থিত নতুন আফগান সরকার। দেশটিতে মার্কিন সেনা অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয় সরকার-তালেবানের বিরোধ।

প্রায় ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে তলেবান নির্মূলে চেষ্টা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, সেনা মোতায়েন, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি আর খরচের হিসাবে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। অবশেষে ২০১৪ সালে দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এবছর নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেনা প্রত্যাহার জারি রাখেন। 

মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের এমন পিছু হটাকে পরাজয় হিসেবে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি এমন হস্তক্ষেপ অনুচিত বলেই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। সংবাদ প্রকাশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “তালেবানের বিষয়ে বা যেকোনো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আফগানিস্তানের জনগণ নিজেদের মতো করে সমাধান করবে—এমনটাই হওয়া উচিত ছিল। একবার রাশিয়া, একবার যুক্তরাষ্ট্র এবং এর বহু আগে ব্রিটিশরাও তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের বড় একটা পরাজয় হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভিয়েতনামে যে ধরনের পরাজয় হয়েছিল, একই পরাজয় হয়েছে আফগানিস্তানে।”

যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ছায়া সরকারও গঠন করে শান্তি আলোচনাও এগিয়ে নিয়েছে তালেবান। ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশটি থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শেষ হবে। তবে সেনা প্রত্যাহার শুরুর সঙ্গে তাল মিলিয়েই দেশজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে তালেবান।

বিদেশি সাহায্য না পাওয়ায় অনেকটাই কোণঠাসা সরকার। তালেবানের ক্রমবর্ধমান অগ্রাসন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি বাহিনী। প্রতিদিনই একের পর এক প্রদেশ দখলে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা। ধারণা করা হচ্ছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্রোহীদের হাতে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটতে পারে।

যেকোনো সময় সরকারের ক্ষমতা চলে যেতে পারে তালেবানের হাতে। সে ক্ষেত্রে নতুন তালেবান সরকার কেমন হবে, সে বিষয়ে ড. ইমতিয়াজ বলেন, “আমার মনে হয় তালেবান ২০ বছর ধরে যে যুদ্ধ করেছে, সেখান থেকে তাদেরও অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে। তাই আমাদের আশা থাকবে তালেবান তাদের আগের অবস্থায় ফিরবে না। ইসলামের সহিষ্ণুতার যে দিকগুলো আছে, ভালো দিক আছে, সেটি হয়তো তালেবানের রাজনীতিতে ফুটে উঠবে। প্রত্যেক ধর্মেই কিন্তু সহিষ্ণুতার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। যদিও ধর্মকে অন্য খাতে ব্যবহারও হয়ে থাকে। তবে আমার মনে হয় তারা (তালেবান) আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনেই রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করবে।”

আফগানিস্তান সরকার তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে সমাধান যা-ই হোক, সিদ্ধান্তটি অবশ্যই দেশটির জনগণকেই নিতে হবে বলে জোর দিচ্ছেন ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, আফগানিস্তান প্রাচীন সভ্যতার একটি দেশ। সেখানে বাইরে থেকে সমাধান আসবে না, আফগান জনগণের নিজেদেরই করতে হবে। আফগানিস্তানের জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

Link copied!