স্পিরুলিনা নামটির সঙ্গে আমরা অনেকেই অপরিচিত। এটি নীলাভ-সবুজ শৈবালজাতীয় ছোট জলজ উদ্ভিদ। স্পিরুলিনা সাধারণত পানিতে জন্মে। তবে সামুদ্রিক শৈবাল হিসেবেই এটি বেশি পরিচিত। তবে নামটি অপরিচিত হলেও এতে প্রায় সব ধরনের নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে।
এ শৈবালে আছে ভিটামিন বি-১, ২ ও ৩; কপার, আয়রন, ক্যালোরি ও হজমে সাহায্যকারী উপাদান। স্পিরুলিনা মানবদেহের নানান রোগ প্রতিহত করতে সক্ষম। এ কারণে ইদানীং দেশের অনেক জায়গায় স্পিরুলিনা চাষের কথাও শোনা যাচ্ছে।
বিসিএসআইআর’র বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান বাজারে স্পিরুলিনা ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, পাউডাররূপে পাওয়া যায়। এছাড়া চা পাতি বা রুটি, আলুভর্তা, নুডলস্, শরবত, হালুয়া ইত্যাদিতে স্পিরুলিনা মিশিয়ে নানা খাবার তৈরি করা সম্ভব।
চলুন তবে জেনে নেয়া যাক স্পিরুলিনার ওসুধি গুণাগুণ সম্পর্কে-
ক্যান্সার প্রতিরোধক
স্পিরুলিনায় আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা মানুষের দেহের কোষকে ক্যান্সারের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। স্পিরুলিনায় আছে নীল-সবুজাভ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফিকোকিয়ানিন। যা দেহের অতিরিক্ত মাংশপেশীর বৃদ্ধির সংকেত দেয় এবং তা রোধ করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করে
এতে প্রচুর ক্লোরোফিল ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই ক্লোরোফিল ও ম্যাগনেসিয়াম মিলিত হয়ে রক্তের দূষক পদার্থসমূহ দূর করে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৯-১০ গ্রাম করে স্পিরুলিনা খাওয়ালে ৪-৬ মাস পর রোগির আর্সেনিকজনিত চর্মরোগ সম্পূর্ণরূপে উপশম হয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
এতে উচ্চমাত্রায় গামা লিনোলেয়িক অ্যাসিড রয়েছে। যা দেহের ক্ষতিকারক এলডিএলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
হজমশক্তি বাড়ায়
ই-কোলাই এবং ক্যান্ডিডার মত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি দমন করে। স্পিরুলিনা পাচনতন্ত্রে বসবাসকারী ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। সুতরাং এটি পুষ্টি শোষণ করে শরীরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে হজমশক্তি বাড়ায়।
কিডনিকে রক্ষা করে
স্পিরুলিনার ক্লোরোফিল একটি উচ্চ ঘনত্ব সম্পন্ন এবং সেরা প্রাকৃতিক ডিটোক্সিফায়র। এটি কিডনি থেকে ভারি ধাতু, ক্ষতিকারক রশ্মি এবং দূষণকারী ধাতু সরিয়ে কিডনির বিষাক্ততা কমায়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। কারণ এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সহজে বাড়তে দেয় না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
হৃদরোগের অন্যতম কারণ রক্তে খারাপ কোলোস্টেরল বেড়ে যাওয়া। নিয়মিত স্পিরুলিনা (মাত্র ১ গ্রাম) গ্রহণে এটির পরিমাণ থাকে নিয়ন্ত্রণে।
উচ্চরক্তচাপ ও অ্যানিমিয়া কমায়
স্পিরুলিনা রক্ত তরল রাখতে সাহায্য করে যা হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য খুশির খবর। নিয়মিত ৪.৫ গ্রাম স্পিরুলিনা সেবনে রক্তচাপ যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকে তেমনি রক্তাল্পতাও চলে যায়।
গবেষকরা বলেন, প্রতিদিন ৪ থেকে ৭ গ্রাম পর্যন্ত স্পিরুলিনা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে ১৫ গ্রামের বেশি স্পিরুলিনা গ্রহণ না করাই উত্তম।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া