• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ঢাকা কাঁপাতে আসছে ‘বাংলার বস’


যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
ঢাকা কাঁপাতে আসছে ‘বাংলার বস’

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য যশোরের মণিরামপুরে প্রস্তুত করা হয়েছে ‘বাংলার বস-৫’ নামের বিশালদেহী এক ষাঁড়। কালো রঙের ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩০ মণ।

উপজেলার ভোজগাতী ইউনিয়নের হুরগাতী গ্রামের খামারি আসমত আলী গাইন ষাঁড়টিকে লালন-পালন করেছেন। দু’একদিনের মধ্যেই ‘বাংলার বস-৫’কে ঢাকার গাবতলী পশুহাটে নিয়ে যাওয়া হবে।

কোরবানির হাটে তোলার আগেই বিশালদেহী কালো রঙের ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টি নজর কেড়েছে সবার। এর উচ্চতা ৬৫ ইঞ্চি এবং লম্বায় ৯৬ ইঞ্চি; ওজন প্রায় ৩০ মণ। খামারি ষাঁড়টির দাম ধরেছেন ১২ লাখ টাকা।

আসমত আলী জানান, গত বছর ‘বাংলার বস-৪’ গাবতলীর হাটে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। টাঙ্গাইলের শফিপুর এলাকার লাবিব গ্রুপের মালিক সেটি কিনে নিয়ে যান। এ বছর ঈদ বাজারের জন্য তিনি প্রস্তুত করেছেন ৬টি ষাঁড়। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ষাঁড়গুলো গাবতলী হাটে নিয়ে যাবেন। আশা করছেন এবারও কাঙ্ক্ষিত দামে ষাঁড়গুলো বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তার খামারের ষাঁড় বেশ কয়েকবার বিভিন্ন কোরবানি হাটে চমক সৃষ্টি করেছে। ঢাকার গাবতলী গরু হাটে কয়েক বছর ধরে তিনি ষাঁড় নিয়ে যান। তার প্রতিপালন করা ষাঁড়গুলোর নাম রেখেছেন বাংলার বস, বাংলার সম্রাট আর জলহস্তি। প্রথম যে ষাঁড়টি বড় করে গাবতলী নিয়ে যান, তার নাম ছিল বাংলার বস-১। এরপর বাংলার বস-৫ পর্যন্ত নামকরণ হয়েছে। এর আগে জলহস্তি-১ ও ২ বিক্রি করেছেন। এবার নতুন নামে যাচ্ছে আরেকটি ষাঁড় বাংলার সম্রাট। যার ওজন ২৫ মণ এবং দাম চাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, খামারি আসমত আলীর বয়স ৩৯ বছর। জীবিকার জন্য কৈশোরে চালিয়েছেন রিকশা, বাদামও বিক্রি করেছেন। কিন্তু শৈশব থেকে গরু পালনের প্রতি তার যে আগ্রহ ও ভালোবাসা, সেটা থেকেই সফলতা পেয়েছেন। তার ব্যবসা মূলত ডেইরি ফার্মের। ষাঁড় ছাড়াও গাভী-বাছুর আছে ২৫টি।

আসমত আলী জানান, মাত্র দুইটি গরু দিয়েই শুরু হয় খামারের কাজ। গত ৪-৫ বছর ধরে তার খামারে ৪৫ থেকে ৬০টি গরু পালন হয়েছে। রয়েছে তিনটি শেড। এক শতক পৈত্রিক জমি থেকে আজ তিনি ১৭১ শতক জমির মালিক।

শুরুর সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে আসমত আলী গাইন বলেন, ২০০৪ সালে ধারদেনা করে তিনি গরু পালন ও বেচাকেনার শুরু করেন। কিন্তু লাভের একটা ছোট অংশই তিনি পেতেন। যারা পুঁজি লগ্নি করতেন, বেশিরভাগ তারাই নিয়ে যেতেন। পরে দায়দেনায় বাধ্য হয়ে ওই বছরই ঢাকায় চলে যান। সেখানে প্রায় দুই বছর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ফের বাড়ি ফেরেন। তখন চাচারা বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতে থেকে গরু প্রতিপালন করো’। এরপর ২০০৬ সালে গরু কেনা, প্রতিপালন ও বিক্রি শুরু করেন। ২০০৮ সালে পূর্ণমাত্রায় ফার্মের কাজ শুরু হয়। তখন গরু বিক্রির সঙ্গে প্রধান কাজ ছিল গরুর দুধ বিক্রি।

গরু প্রতিপালনে তাকে সবসময় সহযোগিতা করেন স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। তিনি বলেন, “গরুর গোয়াল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি গরুর তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করি। সকালে তাদের ঘাস, বিচালি, খৈল দিয়ে মাখিয়ে খাবার দেওয়া লাগে। দুপুরে আর রাতে তাদের চালের খুঁদ (ভাঙা চাল) সিদ্ধ করে খেতে দিতে হয়। এই খাবারের সঙ্গে ভুট্টার গুঁড়ো আর চিটাগুড় দেওয়া লাগে।”

আসমত আলী বলেন, গরুপ্রতি প্রতিদিন খাবারের জন্যে ব্যয় পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। অসুখ-বিসুখ হলে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালনে তার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তারই আলোকে চিকিৎসা করেন।

তিনি বলেন, “সরকার আমাদের মতো ক্ষুদ্র খামারিদের পাশে দাঁড়ালে আমরাও উন্নতমানের ষাঁড় প্রতিপালন করতে পারব। দেশে মাংসের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবো। এরইমধ্যে আমার প্রতিপালন করা ষাঁড়গুলো বেশ নাম করলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কখনোই আমার খামারে আসেননি।”

মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের উপজেলাটি বেশ বড়। এখানে খামার ও ব্যক্তিপর্যায়ে সবার কাছে পৌঁছানো দুরূহ হয়ে পড়ে। কেননা আমাদের লোকবলের সংকট (৬ জন) রয়েছে। তারপরও বিভিন্ন খামারে, ব্যক্তি পর্যায়ে যারা গরু লালনপালন করে, তাদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।”

Link copied!