বন্ধ ঘরে চুপচাপ বসে আছেন, হঠাৎ কানে প্রিয়জনের আওয়াজ শুনতে পেলেন, এমনটা হয়েছে কখনো? আবার বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা যেন আচমকা বেজে উঠল, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। আমাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, যাকে আমরা মনের ভুল বা কানের ভুল বলে থাকি। তবে এই সমস্যার আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, যাকে চিকিৎসার ভাষায় হ্যালুসিনেশন বলে।
হ্যালুসিনেশন হলো, বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই মস্তিষ্কে বাস্তবের মতো অনুভূতি প্রত্যক্ষণের প্রক্রিয়া। হ্যালুসিনেশন একদম স্পষ্ট ও বাস্তবসদৃশ স্থায়ী হয়ে থাকে। তা ছাড়া হ্যালুসিনেশন বাস্তব জগতের স্থানও দখল করে। হ্যালুসিনেশন দেহের প্রতিটি ইন্দ্রিয়তে ঘটতে পারে।
হ্যালুসিনেশন কোনো রোগ নয়, এটি অন্য রোগের উপসর্গ। এটি সাধারণত মানসিক রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকেও হ্যালুসিনেশন হতে পারে। তাই কেবল হ্যালুসিনেশন দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
বিভিন্ন কারণে হ্যালুসিনেশন ঘটতে দেখা যায়।
- সিজোফ্রেনিয়া, সিভিয়ার মুড ডিসঅর্ডার, ডিল্যুশনাল ডিসঅর্ডারে রোগীর প্রায়ই হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগস বা অ্যালকোহল সেবনের কারণে
- মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং ইন্দ্রিয়ের সমস্যায় হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
- শরীরে লবণের তারতম্যের জন্যও স্বল্প মেয়াদের হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।
- প্রচণ্ড জ্বর হলে বিশেষ করে শিশুদের হ্যালুসিনেশন হয়। মৃগীরোগ, বিষণ্ণতা, হিস্টিরিয়া এমনকি ব্রেন টিউমারের বেলাতেও হ্যালুসিনেশন ঘটতে পারে।
- লিভার বা কিডনির সমস্যা প্রভৃতি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হলে।
হ্যালুসিনেশন নির্ণয় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।যেহেতু হ্যালুসিনেশন নিজে একা থাকে না, তাই এর পেছনের রোগটির ধরনের সঙ্গেও এর অনেক মিল থাকে। হ্যালুসিনেশন নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই সার্বিক রোগ নির্ণয় করা জরুরি এবং অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে করা উচিত। চিকিৎসা বিষয়টি নির্ভর করে হ্যালুসিনেশনের পেছনে থাকা রোগটির ওপর। অর্থাৎ রোগটির চিকিৎসা মানেই হ্যালুসিনেশনের চিকিৎসা।
সূত্র: এনটিভি