একটু পরেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। অথবা কোনো ইন্টারভিউ টেবিলের সামনে বসে আছেন। অফিসে প্রেজেন্টেশনের জন্য দাঁড়াতে হবে কিন্তু কী বলবেন বুঝতে পারছেন না।
ঠিক তখনই শুরু হয়ে গেলো বুকের ভেতর ধুকধুকানি। ঘামতে শুরু করে দিলো শরীর। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। শরীর অসাড় হতে লাগলো। এটাকেই বলা হয় নার্ভাস ব্রেকডাউন। এসময় একেবারেই অপ্রস্তুত মনে হয় নিজেকে। জানা সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যেতে থাকে।
গবেষকরা বলছেন, এটি একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সংকট যা উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা প্রকাশ করে। নার্ভাস ব্রেকডাউনের সময় যে কারও জন্য তার প্রতিদিনের কাজগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে ওঠে। এই সব ক্ষেত্রে কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়াটা সবচেয়ে ভালো।
নার্ভাস হলে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়
- নার্ভাস ব্রেকডাউনের হলে সীমাহীন ক্লান্তি লাগে শরীরে। এই ক্লান্তি দৈনন্দিন কাজ করা বা নিয়মিত ঘুমের চক্রকেও ব্যহত করে।
- নার্ভাস ব্রেকডাউনের ফলে সারাক্ষণ ভয় এবং অস্বস্তি অনুভব হয়। এর ফলে দেখা দেয় শারীরিক সমস্যা।
- এ সময় ভয়াবহ বিষাদ এবং হতাশা দেখা দেয়। নিজের পছন্দের কাজগুলোও ছাড়া কোনোকিছু আর করতে ইচ্ছা করে না।
- মেজাজ সারাক্ষণ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি ছোটখাটো বিষয় নিয়েও দ্রুত রেগে যেতে পারেন।
- মানসিক যন্ত্রণা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষই এ সময় একা হয়ে যেতে থাকে। বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তারা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো মানসিক শক্তি পান না।
যা করতে হবে
লম্বা শ্বাস নিতে হবে
নিজেকে শান্ত রাখার জন্য প্রথমত নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিতে হবে। কিছুক্ষণ ধরে রেখে তা মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হবে। এটা ক্রমাগত কয়েকবার করতে হবে। এতে শরীরের রক্ত চলাচলের মধ্য দিয়ে ভেতরে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন নির্গত হয়। এই এন্ডোরফিন আমাদের শারীরিক ব্যথা, দুশ্চিন্তা এবং নার্ভাসনেস সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
নিজের কল্পনার শিকার হওয়া যাবে না
ধরে নিন, আপনি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন এবং মনে হচ্ছে ইন্টারভিউটি কোনো কারণে মনের মতো হবে না। কোনো না কোনো ভুল করে বসবেন এবং বাদ পড়ে যাবেন। যখন আপনি নার্ভাস থাকেন তখন সেই ভাবনাকে সত্যি বলে ধরে নেন। আর তখনই নিজের অজান্তেই সত্যি সত্যিই সে ইন্টারভিউটি ভালো হবে না। তার মানে আপনি নিজের এক বিমূর্ত কল্পনার শিকার হচ্ছেন। এটি হওয়া যাবে না।
পরিস্থিতি বুঝে শান্ত থাকা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো কঠিন মুহূর্তে পরিস্থিতিটি না বুঝেই শান্ত হবার অবিরত চেষ্টা করা মানে নিজের ভীতিকে বাড়িয়ে তোলা। কারণ, আমরা যখনই নার্ভাস এর উদ্দীপনাগুলো অনুভব করি, তখন আমাদের এটিকে জয় করার একটা সহজাত ধাপ তৈরি হয়ে যায়। যার কারণে বারবার মনকে শান্ত করার অনর্গল চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। মনে রাখতে হবে নিজের ওপর জোর করে কখনো মনকে শান্ত করা সম্ভব নয়। সুতরাং, যে পরিস্থিতিই আসুক না কেনো সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।
মনের নিয়ন্ত্রণ করা
আমাদের মন দুইভাবে কাজ করে। এক, যখন মনের ওপর আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এবং দুই, যখন আমাদের ওপর মনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। সুতরাং সবসময়ই মনের প্রতি সজাগ থাকতে হবে। বুঝে নিতে হবে যে, এরকম উদ্দীপনার সময় চিন্তা একটি প্রবাহমান নদীর মত কাজ করে। এই নদীতে বেশিরভাগ সময়ই এমন সব ভাবনা থাকে যা আমাদের ইচ্ছার সম্পূর্ণ বিপরীত। এ সময় ভাবতে হবে কোন ভাবনাটির মধ্যে যৌক্তিকতা আছে আর কোনটির মধ্যে নেই। সে অনুসারে কোনটি গ্রহণযোগ্য তা বিচার করা।
আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে
পৃথিবীতে আত্মবিশ্বাস ছাড়া কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। যখনই নার্ভাসনেস অনুভব হবে তখনই মনে করার চেষ্টার করুন আপনার সবচেয়ে সফলতার কথা। আপনার অর্জনগুলো কেমন ছিলো। সুখের স্মৃতি মনে করার চেষ্টা চালাতে থাকুন। ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক অনুভূতিতে ফিরে আসতে পারবেন। মনে রাখতে হবে আত্মবিশ্বাসই আপনার একমাত্র শক্তি।
নার্ভাস ব্রেকডাউনের সম্মুখীন হলে, অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কখনোই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা চাপ এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। কাউন্সেলিং, ওষুধ বা জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।