যে ভয়াবহ কারণে শিশুর দৃষ্টি ক্ষীণ হচ্ছে, করণীয় কী?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম
যে ভয়াবহ কারণে শিশুর দৃষ্টি ক্ষীণ হচ্ছে, করণীয় কী?
ছবি : সংগৃহীত

সারা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি শিশু-কিশোর ২০৫০ সাল নাগাদ ক্ষীণদৃষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করছে এক দল গবেষক। তাদের এই ধারণা এসেছে সম্প্রতি তাদেরই করা এক গবেষণা থেকে। এ গবেষণায় ছয় মহাদেশের ৫০টি দেশের ৫ মিলিয়নেরও বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ শিশু ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন—অর্থাৎ তারা দূরের জিনিস স্পষ্টভাবে দেখতে পায় না। ধীরে ধীরে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে জানা যায়। গবেষণাপত্রটি ব্রিটিশ জার্নাল অভ অফথালমোলজিতে প্রকাশিত হয়।

শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় লকডাউনে ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় শিশুরা স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটিয়েছে, বাইরে সময় কাটিয়েছে কম। এটি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া জিনগত কারণেও এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে।

এদিকে শিশুর দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কন্সালট্যান্ট ইয়াসমিন আকতার বলেন, শৈশবে যেহেতু চোখের পরিপূর্ণতা আসতে থাকে তখন যারা দীর্ঘসময় কাছে ফোকাস করে দেখে তাদের ক্ষেত্রে মায়োপিয়া বেশি হয়।

কোভিড মহামারীর সময় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস মূলত মোবাইলে আসক্তির শুরু বলে মনে করেন ইয়াসমিন আকতার। এই কনসালটেন্ট জানান, ক্লাস ছাড়াও অনেক শিশুরা মোবাইলে গেমস খেলে আবার কোনও কোনও মা সন্তানকে ব্যস্ত রাখার জন্য শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে রাখে। শিশুরা মোবাইলে কার্টুন, গেমস ও ইউটিউবে দীর্ঘসময় ধরে ভিডিও দেখে। এতে অনেক বাচ্চা ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের সামান্য মায়োপিয়া ছিল তাদের বেশি মাত্রায় হচ্ছে। আর সেই বাচ্চা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার না করে তাহলে সে পরবর্তীতে চশমা দিয়েও স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পায় না।

শিশুদের দৃষ্টির সুরক্ষার করণীয়

শিশুদের দৃষ্টি সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কন্সালট্যান্ট ইয়াসমিন আকতার কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেন। যেমন-

  • প্রথমত শিশুকে মোবাইল আসক্তি কমাতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস কমাতে হবে। যদি একেবারেই সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে শিশুদের মোবাইল না দিয়ে বড় স্ক্রিন যেমন ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে ক্লাস করতে দিতে হবে। এতে ক্ষতির হার তুলনামূলক কম হবে।
  • শিশুদের মোবাইল না দিয়ে খেলনা কিনে দিন, যেগুলোতে তাদের ব্রেনের বিকাশ হবে। যেমন- বিভিন্ন পাজল, বিল্ডিং ব্লকস, স্ট্যাকিং রিংস। এধরণের খেলনা শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটায়।
  • শিশুদের ক্ষীণদৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার হার কমাতে প্রতিদিন অন্তত একটা নির্দিষ্ট সময় বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বাইরে সূর্যালোকের আলোয় খেলাধুলা শিশুর চোখের জন্য উপকারী।

পরিবারে যদি মায়োপিয়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে সন্তানের ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর শিশুর চোখ পরীক্ষা করানো দরকার। এমনকি বাবা-মায়েদের উচিত তাদের বাচ্চাদের সাত থেকে ১০ বছর বয়সে চোখের পরীক্ষা করানো, এমনকি যদি তাদের কম বয়সেও দৃষ্টি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

শিশুর চোখে জন্মগত ত্রুটি আছে কি না, এর জন্য জন্মের পরেই একবার পরীক্ষা করানোর কথা বলেন ইয়াসমিন আকতার। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 
*বয়স ৬ মাস থেকে একবছরের মধ্যে একবার
*১-৩ বছর এর মধ্যে একবার
*৩-৫ বছরের মধ্যে একবার
*৫ পূর্ণ হবার পর আরও একবার পরীক্ষা করানোর কথা। 
তবে যাদের মায়োপিয়া আছে এমন শিশুদের ৬ মাস পর পর চোখ পরীক্ষা করাতে হয়; কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক আরও অল্প সময়ের ব্যবধানে চোখ পরীক্ষার জন্য ডেকে থাকেন। যাদের ইতোমধ্যে amblyopia হয়ে গেছে তাদের আরও ঘন ঘন চেক আপ, বিশেষ ধরনের ব্যায়াম, বিশেষ ধরনের চশমা প্রয়োজন হয়।

প্রতিবার চোখ পরীক্ষার পর অবশ্যই সঠিক(হালনাগাদ) পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ইয়াসমিন আকতার।

Link copied!