• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মুহররম ১৪৪৬

জাপানিদের সুস্থ থাকার গোপন রহস্য


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ১০:১৮ পিএম
জাপানিদের সুস্থ থাকার গোপন রহস্য

জাপানিদের বিষয়ে যে কথাটি এক বাক্যে সবাই বলে সেটা হলো, জাপানিরা অনেক বেশি কর্মঠ জাতি। সে সঙ্গে তারা দীর্ঘ জীবন বেঁচে থাকে। জাপানিদের দীর্ঘ জীবন ও কর্মঠ হওয়ার পেছনে কিছু কৌশল রয়েছে । এই কৌশলগুলো কিছু ঐতিহ্যবাহী, কিছু আধুনিক। জাপানিদের দীর্ঘ জীবন ও কর্মঠ হওয়ার কিছু কৌশল জেনে নেওয়া যাক।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

জাপানিরা অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জাতি। দৈনন্দিন জীবনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জাপানিদের একটি অন্যতম অভ্যাস। তারা বাসাবাড়ির ভেতর যেমন পরিষ্কার রাখে তেমনি ঘরের বাইরের পরিবেশও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে। জাপানিরা তাদের শিশুদের ছোট বেলা থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস করার শিক্ষা দেয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে তারা সবসময় স্বাস্থকর পরিবেশ তৈরি করে। 

গোসল

প্রতিদিন গোসলের অভ্যাসও জাপানিদের স্বুস্থ রাখতে সহায়তা করে। জাপান জুড়ে ৩ হাজার উষ্ণ প্রস্রবন আছে। বিভিন্ন স্থানে জনসাধারানের জন্য গোসল খানা রয়েছে। আর অবশ্যই প্রত্যেক বাসায় গোসল খানাও আছে। কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে শরীর গরম হয়। ফলে মাংস পেশী শিথিল হয়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। পুকুর নদী বা বাথটাবে গোসল করলে পানির চাপ শরীরে সমানভাবে পরে। গবেষণায় বলা হয়, গোসলের ফলে বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং শরীরের ভেতর জমে থাকা বিষাক্ত আবর্জনা বের হয়ে যায়। এছাড়াও শরীর পানিতে ভেসে থাকার কারণে অস্থিসন্ধিতে জমে থাকা চাপ প্রশমন হয় এবং ব্যথা নিরাময় হয়। শরীর মন চাঙ্গা হয়, ক্লান্তি দূর করে।

ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠা

প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস জাপানিদের দীর্ঘায়ুর অন্যতম নিয়ামক। ঘুমের স্বল্পতা নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা তৈরি করে। যেমন দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে বেশি অসুস্থতা দেখা দেয়। রক্তচাপ হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে সারাদিন অনেক কাজ করার সময় পাওয়া যায়। রাতে ঘুম ভালো হয়। সকালের সূর্যের আলো শরীরে লাগলে দেহঘড়ী স্বাভাবিক থাকে। ভোরে ঘুম থেকে উঠলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। মনযোগ বৃদ্ধি করে। শারীরিক স্থুলতা ও নানা জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।
 

শরীর চর্চা

জাপানিরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিদিন শরীর চর্চা করে। জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জাপানিদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৯২৮ সালে বিশেষ এক ধরনের প্রাত্যহিক শরীর চর্চা পদ্ধতি চালু করে। যেটা রেডিও কালিস্থানিক নামে পরিচিত। শরীর চর্চার কিছু কৌশলের সমন্বয়ে সঙ্গীতের সঙ্গে এই ব্য়ায়াম করা হয়। শিশু বৃদ্ধ সবাই এই ব্যয়াম করতে পারে।
 

হাঁটাহাঁটি

জাপানিদের হাটাহাটির অভ্যাস রয়েছে। যা তাদের সুস্বাস্থ্যের অন্যতম সূত্র। আমাদের দেশে সামান্য এদিক সেদিক যেতে রিকশা ব্যবহার করা হয়। জাপানিরা কিন্তু এর বিপরীত। কাছে বা দূরে যতটুকু সম্ভব জাপানিরা হেটে গন্তব্যে পৌঁছায়। হাটাহাটি শরীরের বাড়তি ওজন হ্রাস করে এবং  ওজনকে স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া হাড় ও পেশি মজবুত রাখে এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

খাদ্যাভ্যাস জাপানিরা অত্যন্ত সচেতন। জাপানি খাদ্যকে স্বাস্থ্যকর বলা হয়। কারণ এর মধ্যে পুষ্টিগুণের সঠিক ভারসাম্য থাকে। আমাদের মতোই তারা ভাত খায়। ভাতে আছে প্রচুর শর্করা। ভাতের সঙ্গে থাকে মাছ অথবা সয়াপ্রোটিন খাবার। জাপানিরা তাদের খাদ্য তালিকায় সবসময়  শাক সবজি রাখে। এধরনের খাবার পরিপাক তন্ত্র ও হজমে অনেক উপকারী। এসব খাদ্য শরীরকে রাখে সতেজ, সজীব ও প্রাণবন্ত।

মাচা চা

মাচা চা হচ্ছে বিশেষভাবে উত্পন্ন ও প্রক্রিয়া করে গুড়ো করা সবুজ চা পাতা। এর মধ্যে অধিক পরিমান থায়ানিন ও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ক্লোরোফিল থাকায় শরীরের দূষিত বর্জ্য অপসারণেও অত্যন্ত কার্যকর। মাচাতে আরও আছে ক্যালসিয়াম, ডায়াটারি ফাইবার। মাচা চা সরাসরি চা পাতা থেকে প্রস্তুত হয় বলে সাধারন চা পাতা থেকে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে। 

সুস্বাস্থ্য সবার কাম্য। পর্যাপ্ত সুষম খাবার, ব্যায়াম, বিশ্রাম সব কিছু সুস্বাস্থ্যে র জন্য প্রয়োজন। কাজেই সুস্থ সুন্দর কর্মঠ জীবনের জন্য উপরের অভ্যাসগুলো আজ থেকেই চর্চা শুরু করতে পারেন।

Link copied!