• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মোবাইল ফোনে শিশুদের আসক্তির কারণ ও প্রতিকার


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম
মোবাইল ফোনে শিশুদের আসক্তির কারণ ও প্রতিকার

নানারকম সতর্কবাণী থাকা সত্ত্বেও অনেক সচেতন বাবা-মাকে শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দিতে দেখা যায়। এছাড়া আজকাল স্কুল-কলেজের পড়াশুনার সঙ্গেও ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে ডিভাইস। প্রযুক্তি আমাদের অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিক। কিন্ত এর ক্ষতিকারক প্রভাবটা খেয়াল রাখাও  গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ- এসব ডিভাইস সৃজনশীল এবং সুবিধাজনক। কিন্তু শিশুদের জন্য এটি বেশ বিপদজনক। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অর্থাৎ অত্যধিক স্ক্রিন টাইম শৈশবের সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর ভীষণ রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব ফেলে।

ক্ষতিকর দিকগুলো হলো-

* ডিভাইসে আসক্তির কারণে তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন- খেলাধুলা, দৌঁড়ানো বা সাইকেল চালানো মিস করে; ফলে তাদের দক্ষতা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

* টিভি, মোবাইল গেম বা যেকোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময় আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এ ডোপামিন আমাদের মনে এক ভালোলাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। যার ফলে অতি সহজেই আমরা এ ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়াগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ি।

শিশুদের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় সমস্যা দেখা যায়। সেগুলো মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-

• শিশু সময়মতো খেতে চাইবে না। এর ফলে অপুষ্টিতে ভুগবে।
• সবার আগে প্রভাব পড়বে চোখের ওপর। দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। ঘাড়ে ব্যথা হবে।
• জেদি, অতিচঞ্চল ও বদমেজাজি হয়ে উঠবে।
• পড়ালেখা ও কর্মজীবনের মান কমে যাবে।
• অতি উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা এবং তীব্র মানসিক চাপের মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। 
• পারিবারিক মূল্যবোধ বিনষ্ট ও মা-বাবার উপদেশ না মানার প্রবণতা তৈরি হবে।
• মোবাইলের কারণে অতিরিক্ত সেলফি তোলা বা সেলফিটিস নামের নতুন একটি মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার অনেক দুঘর্টনা ঘটতেও দেখা গেছে।
• মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন ও ফসলি জমিতে যে টাওয়ারগুলো নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোর ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ফলে মানব শরীরের পাশাপাশি গাছপালা, ফলফলাদি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
• স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি।

প্রতিকার

• বাচ্চাদের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করুন। আজকাল বেশিরভাগই ছোট পরিবার। তাই বন্ধু ও পরিজনহীন বাড়িতে টিভিকেই তারা পরম বন্ধু করে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা-বাবা দুজনই চাকরিজীবী। অফিস শেষ করে বিকালে বাচ্চার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিটির পরিকল্পনা করুন। যেমন- নাচ, গান, আবৃত্তি, মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট শেখানো। এভাবে সমবয়সি বাচ্চাদের সঙ্গে সময়ও কাটাতে পারবে, ওদের একাকিত্বও ঘুচবে।
• বাচ্চার মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। তাহলে টিভি, মোবাইল বা ভিডিও গেমের আসক্তি থেকে অনেক সহজেই বাচ্চাকে দূরে রাখা যায়।
• মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধুলা করুন।
• অনেক সময় বিভিন্ন কার্টুন ক্যারেক্টারের মারপিট বা মোবাইল গেমের কার ক্র্যাশিং খেলা বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। তারা অতিরিক্ত হাইপার অ্যাক্টিভ বা অ্যাগ্রেসিভ হয়ে ওঠে। তাই লক্ষ রাখুন, কী ধরনের প্রোগ্রাম বাচ্চারা দেখছে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার পাশে বসে ওকে সঠিক ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিন।
• বাচ্চাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিন সময় মেপে। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার বাড়ির এমন একটি জায়গায় রাখুন, যাতে তা বড়দের চোখের সামনে থাকে। তাতে বাচ্চারা কী ধরনের বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে নাড়াচাড়া করছে তা নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
• বাচ্চার খাওয়ানোর সময় বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে কোনো ধরনের ডিভাসের অভ্যাস রাখবেন না। বরং গল্প বলুন। তাতে বাচ্চা অনেক ধরনের প্রশ্ন করতে শিখবে, নতুন বিষয় সম্পর্কে শিখবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে মন বিক্ষিপ্ত থাকবে না।
• শিশুদের ঘরে কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। বিশেষ করে মায়েরা এ কাজটি করতে পারেন। আপনার সন্তানকে ছোট ছোট কাজে সহযোগিতা করা শেখাতে পারেন। এতে আপনার সন্তান ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহী হবে এবং মোবাইল আসক্তি থেকে সরে আসবে।

একটি সুন্দর আধুনিক জীবন ও সুস্থ স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেতে হলে এখনই আমাদের মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ এগিয়ে এলেই মোবাইলের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সম্ভব হবে। 

Link copied!