মূলত মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে অথবা রক্তনালি ফেটে গেলে স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হলে কোষগুলো মরে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সে নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনুরূপ বয়সী পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ। অথচ এই বয়সের অধিকাংশ নারী স্ট্রোক সম্পর্কে সচেতন নন। এখানে মধ্যবয়সী নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন কিছু অভ্যাসের অনুশীলন করা।
বিভিন্ন কারণে স্ট্রোক হতে পারে। তবে গবেষণা বলছে ৩০ শতাংশ নারী স্ট্রোকের দুটির বেশি উপসর্গ বলতে পেরেছেন। মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি এড়াতে স্ট্রোকের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গগুলো অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
স্ট্রোকের উপসর্গ:
- গাল বেঁকে যাওয়া বা ঝুলে পড়া
- গাল অসাড় হওয়া
- বিকৃত হাসি
- দৃষ্টি সমস্যা সৃষ্টি হওয়া
- হাত-পায়ে দুর্বলতা বা অসাড়তা
- হাঁটতে গেলে বারবার পা জড়িয়ে যাওয়া
- কথা জড়িয়ে যাওয়া বা অস্পষ্ট কথা
এসব উপসর্গের কোনোটি দেখা দিলে জরুরি বিভাগে যেতে হবে। চিকিৎসা নিতে যত দেরি হবে, মস্তিষ্কের তত ক্ষতি হবে এবং জটিলতার ঝুঁকি বাড়বে।
আসুন জেনে নেয়া যাক দৈনন্দিন কোন অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে পারলে স্ট্রোকের অশঙ্কা কমে যাবে-
হাঁটার অভ্যাস করুন: প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস তৈরি করুন। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে নারীদের একটা বড় অংশ ঘরে থাকে। প্রতিদিন বাচ্চা সামলানো, খাবার প্রস্তুত করা ও অন্যান্য কাজে তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখে, কিন্তু নিজের জন্য সময় বের করে বাইরে যায় না। যা তাদের শরীরে বিরুপ প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, সপ্তাহে স্বাভাবিক গতিতে ২ ঘণ্টা হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমতে পারে। দ্রুত হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। কাজেই হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।
বিষণ্নতা কমান: ৮০ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত গবেষণা মতে, শুধুমাত্র বিষণ্নতা স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৯ শতাংশ বাড়াতে পারে। এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে গবেষকরা জানান- বিষণ্ন নারীদের ধূমপানের প্রবণতা বেশি, খাবারে মনোযোগী নয় বলে ওজন বেড়ে যায় এবং শরীরচর্চা তেমন করে না। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য সমস্যাও থাকতে পারে, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস।
বিষণ্নতার উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো- প্রতিনিয়ত দুঃখবোধ বা দুশ্চিন্তা, হতাশ হওয়া, নিজেকে অপরাধী ও অযোগ্য মনে করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনোযোগে ব্যর্থতা, ঘুমাতে সমস্যা, বেশি খাওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া, আত্মহত্যার চিন্তা করা ও ঘনঘন মাথাব্যথা।
রাতে ৭ ঘণ্টা ঘুমান: ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশ্রামের প্রয়োজন সবার আগে। তাই সময় করে নিয়মিত কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমান। তবে বেশি ঘুমালে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো ঘুমানো উচিত।
গবেষকরা বলছেন, “প্রতি রাতে ঘুমের জগতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাটালে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময় যাদের নাক ডাকে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বেশি। এমনকি তাদের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেশি।”
মাইগ্রেন নীরব ঘাতক: মাইগ্রেনে ভুগছেন রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক। গবেষকদের ধারণা, যাদের মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেশি। পুরুষদের তুলনায় নারীরাই মাইগ্রেনে বেশি ভুগে থাকেন। মাইগ্রেনের ৩টি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- মাথাব্যথার পূর্বে দৃষ্টি সমস্যা (যেমন- ব্লাইন্ড স্পট বা ফ্লাশ লাইট দেখা), আলো সহ্য করতে না পারা ও বমিভাব। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শে মাইগ্রেন প্রতিরোধী ওষুধ সেবন করুন।
রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: হাইপারটেনশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, রেগে গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যার রাগের প্রবণতা যত বেশি, তার স্ট্রোকের ঝুঁকিও তত বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সহজেই রেগে যান এবং অপরের প্রতি আগ্রাসী হন তাদের ঘাড়ের ধমনীর পুরুত্ব সহনশীল লোকেদের তুলনায় বেশি হয়ে যায়। ধমনীর অধিক পুরুত্ব স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত।