রাজশাহীতে চলতি বছরের ১০ মাসে নতুন করে আরো ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস (এইডস) শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের। এ সময়ের মধ্যে একজন মারাও গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
আক্রান্তদের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একটি এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার রয়েছে। তবে, এখানে কাউন্সেলিং ছাড়া ওষুধ মেলে না। রোগীদের ওষুধ আনতে যেতে হয় বগুড়া। এ অবস্থায় রামেক হাসপাতালে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি চালু হতে পারে।
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের তথ্য বলছে, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহীতে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আটজন। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, দুইজন নারী ও একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
এইচটিসি সেন্টারে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন আসেন পরীক্ষা করাতে। সেখানে পজিটিভ ফল এলে রোগীদের কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। বলা হয়, এইচআইভি পুরোপুরি নিরাময় না হলেও এটি এখন নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।
এদিকে, রাজশাহীতে এইচআইভির ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) যেতে হয়। সেখানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। রাজশাহীতে একটি এআরটি সেন্টার (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এইচটিসি সেন্টারে গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, এক কিশোরসহ চারজন পরীক্ষা করাতে এসেছেন। তাদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গর। সবার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
২০১৯ সাল থেকে রামেক হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারো দেহে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। পরের বছর দুইজন আক্রান্ত হন। ২০২১ সালে ৮ জন, ২০২২ সালে ৮ জন, ২০২৩ সালে ২৪ জন, ২০২৪ সালে ২৭ জন এবং ২০২৫ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়।
হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে আক্রান্ত ২৭ জনের মধ্যে সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৬ জন, যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন এবং রক্ত থেকে একজন। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৭ জন। এছাড়া যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন ও রক্ত থেকে একজন আক্রান্ত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচআইভি আক্রান্ত এক ব্যক্তি বলেন, “রোগটি জানার পর প্রথমে মনে হয়েছিল সব শেষ। পরে রামেকে কাউন্সেলিংয়ে এসে বুঝলাম, এটা এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ নিলে ভালো থাকা যায়। তবে, রাজশাহীতে ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যাওয়া কষ্টকর। এখানেই যদি ওষুধ পাওয়া যেত, আমরা অনেকটা স্বস্তি পেতাম।”
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, “২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।”






































