সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরের ৫ দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রিমান্ড শুনানিতে আনিস আলমগীর বলেন, 'একটা নির্দিষ্ট দল আমাকে তাদের গোলাম বানাতে চায়। কিন্তু আমি তাদের হালুয়া রুটি খাবো না, চাইও না। সাংবাদিক হিসেবে আমার কাজ ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা। আমি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করবো।'
এর আগে আনিস আলমগীরের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার ইন্সপেক্টর মুনিরুজ্জামান এ রিমান্ড আবেদন করেন। এদিন বিকেল ৫টার দিকে মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সাদা গাড়িতে আদালতে আনা হয়। প্রথমে তাকে গারদে রাখা হয়। ৫টা ২৮ মিনিটে গারদ থেকে পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় তাকে বের করে। সিঁড়ি দিয়ে হাঁটিয়ে উঠানো হয় আদালতের ৫তলায়। এসময় তার বুকে বুলেট প্রুভ জ্যাকেট, হাতকড়া ও মাথায় হেলমেট ছিল। বিকাল ৫টা ৩৪ মিনিটে তাকে কাঠগড়ায় উঠানো হয়। এসময় পুলিশ হেলমেট খুলে দিলে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তখন তাকে কান্না করতেও দেখা যায়। আইনজীবীরা তাকে ধৈর্য ধরতে বলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, 'সাংবাদিকতার আড়ালে তিনি (আনিস আলমগীর) কুচক্রী মহলের সঙ্গে জড়িত। দেশদ্রোহী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।'
এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবী নাজনীন সুলতানা বলেন, 'উনি (আনিস আলমগীর) একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক। বাংলাদেশের বাইরেও উনার খ্যাতি আছে। উনি ইরান-ইরাকের যুদ্ধ কাভার করেছেন সাংবাদিক হিসেবে। উনি শুধু সাংবাদিকই নন, একজন শিক্ষকও। তিনি নিয়মিত বই লিখেন। টকশোতে এখন যা বলেন, বিগত সময়ে এর থেকে আরও বেশি বলেছেন। তিনি কথা বলবেন এটাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন হয়েছে?- কথা বলার জন্য। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন হয়েছে তা বাস্তবায়ন করাই উনার উদ্দেশ্য। আমি রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করছি।'
এসময় আদালতের অনুমতি নিয়ে আদালতকে আনিস আলমগীর বলেন, 'মহামান্য আদালত আমি কথা বলতে চাই।' আদালত অনুমতি দিলে তিনি বলেন, 'আমার নাম আনিস আলমগীর। আমি একজন সাংবাদিক। যুদ্ধে তালেবানরা আমাকে এরেস্ট করেছিল। সে সময়ও আমি ভয় পাইনি। মৃত্যু ভয় আমাকে আর তাড়াতে পারে না। আমি খালেদা জিয়ার আমলে প্রশ্ন করেছি, শেখ হাসিনার আমলেও করেছি। এখনও করছি, পরেও করবো। একটা নির্দিষ্ট দল আমাকে তাদের গোলাম বানাতে চায়। কিন্তু আমি তাদের হালুয়া রুটি খাবো না, চাইও না। সাংবাদিক হিসেবে আমার কাজ ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা। আমি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করবো।'
আদালতকে তিনি বলেন, 'প্রতিহিংসার রাজনীতি ঢুকে পড়েছে আমাদের মাঝে। এভাবে চলতে থাকলে এটা চলতে থাকবেই। আমরা জুলাই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছি। কিন্তু এখন পরিবেশ ভিন্ন। ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ যে লকডাউন পালন করেছে আমি সেগুলো নিয়েই কথা বলেছি। এখানে যাদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে তাদের আমি চিনিও না।' তিনি আরও বলেন, 'ড. ইউনূস যদি চান সারাদেশকে কারাগার বানায়ে দিতে পারেন। দেশ দোযখ বানায়ে দিতে পারেন।'
আনিস আলমগীর আদালতকে বলেন, 'আমাকে যে অভিযোগে এনেছে তা মিথ্যা। আমি যে কথা গুলো বলি সেগুলো এমনি এমনি আসেনি, প্রেক্ষিতে এসেছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় দুজন। একজন প্যারিসে আরেকজন নিউইয়র্কে থাকে। এরাই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এরা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। এরা ভিউ ব্যবসা করে। এরাই নির্বাচন চায় না। এই দুই ব্যক্তি বিশেষ একটা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করে। তারা যখন ড. ইউনূস সরকারকে গিয়ে বলেছে তখনই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।'
এসময় পিপি বলেন, 'আসামির এই বক্তব্য এগ্রিসিভ। উনি মানুষের জানমালে আঘাতের জন্য আওয়ামীদের লেলিয়ে দিচ্ছেন। এটা উস্কানিমূলক বক্তব্য ও পরিকল্পিত। বক্তব্য রাখার অনেকগুলো ধরণ আছে অনেকে বক্তব্য রেখেছে কিন্তু সবাইকে তো ধরেনি।' উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আনিস আলমগীরকে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে রোববার রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বরের একটি জিম থেকে বের হওয়ার পর তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে নেয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি গত রাতে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলাটি দায়ের করেন জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ। মামলার অপর আসামিরা হলেন- মারিয়া কিসপট্টা (ফ্যাশন মডেল) ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজের (উপস্থাপক)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে ঘাপটি মেরে দেশে অবস্থান করে দেশকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। আসামিরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে বসে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার গুজব (প্রপাগান্ডা) চালিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা করছে। এসব বিভিন্ন পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন।






























