রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ৫০ ফুট গর্ত থেকে অচেতন অবস্থায় শিশু সাজিদকে উদ্ধার করা হলেও বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হলে ৯টা ৫০ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে ডা. বার্নাবাস হাসদা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটি মারা গিয়েছিল। অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং অক্সিজেন না পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়।
শিশু সাজিদের নানা আইয়ূব আলী বলেন, ‘উদ্ধারের সময় সাজিদ বেঁচে ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছিলেন সে বেঁচে আছে। আমি নিজে দেখেছি সে বেঁচে ছিল। কিন্তু হাসপাতালে আসার পর মারা গেল। মরদেহ তার বাড়ি তানোর কুড়িরহাট পূর্বপাড়া নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাত ৯টায় শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছি। দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর পর জানতে পারি তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

আগুন নেভানো বা পানিতে ডুবে যাওয়া উদ্ধারের চেয়ে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘পাইপটির ব্যাস ছিল মাত্র ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন আবেগের বশবর্তী হয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করায় হিতে বিপরীত হয়েছে। তাদের চেষ্টার ফলে পাইপের ভেতরে প্রচুর মাটি ও খড়কুটো পড়ে যায়, যার কারণে শিশু সাজিদ মাটির নিচে চাপা পড়ে।’
জানা গেছে, গর্ত খননকারীর নাম কছির। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ শিশু সাজিদের মা রুনা খাতুনের।
এদিকে, মৃত্যুর ঘটনায় গর্ত খননকারীর শাস্তি চেয়েছেন শিশুটির মা রুনা খাতুন। ছেলের মৃত্যুর পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘তিন জায়গা খুঁড়েছিল। দুই বছর ধরে বন্ধ না করে গর্তগুলো এভাবে ফেলে রেখেছে। কেন ফেলে রেখেছে? আমি কছিরের শাস্তি চাই, তার বিচার চাই। ঘটনার পর কছির একবার দেখতে এসেছিলেন। তারপর আর আসেননি। তিনি পালিয়ে গেছেন।’
এদিকে ছেলের গর্তে আটকে পড়ার ঘটনায় বাবা রাকিবুল ইসলাম উন্মাদপ্রায়। তিনি কখনো মৌন, কখনো বিলাপ করছেন। কারো সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারছেন না।
তানোর থানার ওসি শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিপের খননকারী কছিরকে পাইনি। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান।’



































