হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার দিন আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মীর কাজ নেন আয়েশা। তার দাবি, এর মধ্যেই চুরির অপবাদ দেওয়া হয় তাকে। এই অপবাদের পর রাগ ও ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গৃহবধূ লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করেন তিনি।
হত্যার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে আয়েশা পালিয়ে চলে যান ঝালকাঠি। সেখান থেকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) তাকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, তাকে চুরির অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্ষোভে তিনি মা-মেয়েকে হত্যা করেছেন।
হত্যাকাণ্ডে আয়েশা একা জড়িত ছিলেন নাকি আরও কেউ ছিল অথবা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য অন্যকিছু কি না, তা-ও যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আসামি গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। গত দুদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। বুধবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আয়েশাকে গ্রেফতার করা হয়। আয়েশা তার শ্বশুরবাড়ি পলাতক ছিলেন। এসময় তার স্বামী রাব্বীকেও আটক করা হয়।
তিনি বলেন, দুজনকে (আয়েশা ও রাব্বী) নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যরা রওয়ানা হয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য হয়তো সামনে আসতে পারে।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে মা-মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা-মেয়েকে আঘাত করা হয়।
ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই গৃহকর্মী বোরকা পরে বাসায় এসেছিলেন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার পরনে ছিল নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস।
ভবনের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসার লিফটে উঠে সাত তলায় যান গৃহকর্মী আয়েশা। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে ও স্কুলের ড্রেস পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে যান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের বাবা আজিজুল ইসলাম ঘটনার দিন সকালে যথারীতি স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় এসে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ দেখতে পান।
আজিজুল ইসলাম বলেন, ভবনের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে চার দিন আগে ওই গৃহকর্মীকে কাজে নেয়। সে সকালে বাসার এসে কাজ করে চলে যেতো। এর মধ্যে রোববার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যায়। সন্দেহ হলেও গৃহকর্মীকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটির পরিচয় ও ফোন নম্বর চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বলেছিল, আগুনে পুড়ে তার মা-বাবা মারা গেছেন। সে-ও আগুনে দগ্ধ হয়েছিল। এসব বলে পরিচয় ও ফোন নম্বর দেয়নি।
আজিজুলের গ্রামের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলায়। ২০১২ সাল থেকে তিনি পরিবার নিয়ে বহুতল ভবনটির সপ্তম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন।


























