• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শুভ জন্মদিন, প্রিয় ফাহাদ ফাসিল


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩, ১০:৪৫ এএম
শুভ জন্মদিন, প্রিয় ফাহাদ ফাসিল
ফাহাদ ফাসিল (ছবি : সংগৃহীত)

আমার এই লেখাটা কেরালার মানুষের পড়ার সম্ভাবনা শূন্য। ফাহাদ ফাসিল বাংলা জানেন না, আমি মালায়লাম জানি না। তবে বাংলাদেশে আপনার বিস্ময়কর লেভেলের অনেক ফ্যান, এ কথাটা আপনি একদিন জানবেন। আমি মোহন লাল, দিলীপ, মামোট্টির অনেক মুভি দেখে শেষ করেছি সাবটাইটেল ছাড়া। চলচ্চিত্রই তো একটা বিশ্বজনীন ভাষা। আর অনুমান করে করে চলতো আমার দিন। আমার মামা বিরক্ত হতো, ‘কী দেখো, বুঝো না সুজো না।’ চাইলে সৃষ্টি রহস্য বোঝা যায় আর এটাতো শুধু সিনেমা।

ফাহাদ ফাসিলের প্রথম দেখা সিনেমা, ‘টুয়েন্টি টু ফিমেল কোট্টাম’। অদ্ভুত এক চলচ্চিত্র। তখন দুনিয়ায় ‘মি টু’ আসেনি। নারীবাদও তখন ভারতের সিনেমায় কম উল্লেখিত ব্যাপার। তখন এ ধরনের সাহসী গল্প। এখানে ফাহাদের ক্যারেক্টারও নেগেটিভ। একটা উঠতি হিরো, শুরুর দিকেই করছে এসব রোল এতেই বোঝা যায়, মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রি কত অন্যরকম। ভারতে এখন নেপোটিজম নিয়ে বড় বড় কথা হচ্ছে, ফাহাদ ফাসিলও কিন্তু স্টার কিড। তার বাবা অত্যন্ত বড় পরিচালক ও প্রযোজক। মালায়লাম লিজেন্ড মোহনলালকে বিখ্যাত করার পেছনে তার বাবার বিশাল অবদান। নিজের ছেলেকেও তিনি ছবিতে এনেছেন। সেই ছবি ভয়াবহ ভাবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার দানই আজকের ফাহাদ। সেদিন এরকম ব্যর্থ না হলে আজ এ ফাহাদকে পেতাম না। দীর্ঘ একটা বিরতি নিয়ে তিনি ফিরে আসেন দুর্দান্ত ভাবে। আমেরিকায় পড়তে যান। সেখানে তার মন বসে না। চাকরি করেন, সেটাও তার ভালো লাগে না। অভিনয় ছাড়া কিছুতেই তিনি মন দেন না। সেই অভিনয়ও আবার ছেড়ে দিতে চান যদি পরিবারকে আরও সময় দেয়া লাগে। অদ্ভুত এক মানুষ তিনি।

কেরালা স্টেট পুরস্কার পাওয়া ‘নর্থ টুয়েন্টিফোর কোট্টাম’ আমার অত্যন্ত প্রিয়। একজন ওসিডির পেশেন্ট হয়ে ফাহাদ ফাসিলের যা অভিনয়, আর মালায়লাম মেইনস্ট্রিম সিনেমার গল্প কত ভালো তা নিয়ে ধারণা হবে। ফাহাদ ফাসিল সবসময়ই মেইনস্ট্রিম। তিনি নিজের আউট অফ দ্য বক্স অভিনয় মেইনস্ট্রিমে দেখাতে চান। তাই আপনি যখন ‘আনন্নাম রসুলাম’ দেখবেন সেই প্রেম আর নিয়তির ব্যর্থতার জন্য মন বিষন্ন হয়ে উঠবে। ‘ওরু ইন্ডিয়ান প্রণয়কথা’ দেখলে একজন চালাক লোকের শর্টকাটে রাজনীতিবিদ হওয়ার চেষ্টা কেমন, তা দেখে আনন্দ পাবেন। ‘রোল মডেল’ ছবিটা দেখলে পাবেন মানুষের জীবনের অদ্ভুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও চিন্তা ভাবনা কেমন হয়। তবে ফাহাদ ফাসিলের একটা সিনেমার কথা বললে আমি সবসময় বলি, ‘মহসিন্তে প্রথিকারাম’ এর কথা। এ সিনেমা তামিল তেলেগু কানাড়া তিন ভাষায় রিমেক হয়েছে। সিনেমাটার গল্পটা এত মিষ্টি আর লোকজ দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। এক ফটোগ্রাফারের গল্প, যার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যায়, ঝোঁকের মাথায় তিনি একজনের সঙ্গে মারামারি করেন। সেখান থেকেই ছবির এগিয়ে যাওয়া। অনেক পুরস্কার পেয়েছে এ ছবিটা। ‘ভারাথান’ আর ‘কার্বন’ এ দুটো ছবিও খুব ভালো। দিলেশ পোট্টানের এক ছবিতে তিনি ছিঁচকে চোরের অভিনয় করেন, তা দেখলে আমাদের মোশাররফ করিমের কথা মনে হবে। দেশে ইন্ডাস্ট্রিটা দাঁড়ালো না বলে ওনার এসব রোল করা হলো না। এ ধরণের ছবি বলিউডেও হয় না। ‘বিক্রম’ ছবিটাও দেখার আগ্রহ পাই ফাহাদের জন্য। ফাহাদ ফাসিল নিজের অভিনয় প্রতিভার চেয়েও বেশী গুরুত্ব দেন ইন্ডাস্ট্রিকে। অসাধারণ সব সিনেমা বানানো হয় বলেই তিনি আজ ফাহাদ ফাসিল। নিজের সাফল্য নিয়ে এখনও খুব উচ্ছ্বসিত নন। তিনি এখনো বাসায় বাজার করেন, এটা ওটা কিনেন। মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রিও ভালো, সবাই সবাইকে ভালোবাসে। কেউ এগিয়ে যাচ্ছে বলে ঘৃণা করা হয় না। আরেকটা ভালো ব্যাপার হলো, সব অভিনেতাই ডিরেক্টর হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। একজন অভিনেতা নিজের ভাষার ছবিকে কতটা ঔন করেন এসবই তার প্রমাণ।

ফাহাদ ফাসিলের একটা ব্যর্থ ছবি আছে। নামটা খটোমটো তাই মনে নেই। সেখানে তিনি বাড়ির কেয়ারটেকার রোলে থাকেন। সে কি দারুণ অভিনয়। কোনো তারকার ফেল খাওয়া মুভি দেখবেন, তখন বুঝবেন তিনি আসল কতটা ভালো নাকি মিডিয়োকোর। নেটফ্লিক্সে দেখা যায়, ‘এনজান প্রকাশন’, কি চমৎকার মুভি। তুমুল ব্যবসাসফল ছবি; কিন্তু কি জীবনমুখী গল্প আর অসাধারণ প্রেজেন্টেশন। কিন্তু ফাহাদ ফাসিল সব সময়ই নতুনের অগ্রদূত। তার সিনেমা ‘ট্রান্স’ এ যা অভিনয় তা মনে রাখতে হবে সবার। এক মোটিভেশন স্পিকার থেকে ধর্মবক্তা হওয়ার গল্প। কি ভালো মেকিং, আর ফাহাদ ফাটিয়ে দিয়েছেন। ‘মালিক’ও অসাধারণ। ‘গডফাদার’কে ট্রিবিউট দেওয়া মুভিতেও তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্য। অবহেলিত প্রান্তিক মানুষদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই জড়িয়েছেন অন্ধকার এক পথে। অনেক হিন্দি ইউটিউবার এভাবে বলেন, ফাহাদ ফাসিল বলিউডকে অভিনয় শেখাতে পারবেন। আমার মনে হয় না এটা কখনও করবেন, তিনি কাউকে কিছু শেখাতে চান না। তিনি অভিনয় করেন এটাই। ‘কুম্বালাংগি নাইটস’ ছবিতে সেই সাইকো কর্তা কিংবা ‘সুপারডিলাক্স’ এ সেলফ অবসেসড নতুন অভিনেতা এসবই তার পরিচয়, তার প্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘পিকু’। প্রিয় অভিনেতা ইরফান খান ও নাসিরুদ্দিন শাহ। ইরফানের মৃত্যুর পর তিনি যে অবলিচুয়রি লিখেছিলেন ইংরেজিতে, তা দুর্দান্ত। বিশাল ভরদ্বাজের তিনি বিশাল ফ্যান। মনি রত্নমের ছবিতে কাজ করতে চান। এসব শুনলে মনে হয় রতনে আসলেই রতন চেনে। ফাহাদ ফাসিলের জন্মদিনে বাংলাদেশ থেকে শুভকামনা ও ভালোবাসা। আরও অনেকদিন মুগ্ধ করে যান, আমাদের। আপনার মত চোখের ব্যবহার, বডি ল্যাংগুয়েজ, ম্যানারিজম ও ন্যাচারাল অভিনেতা গোটা দুনিয়াতেই বিরল। আপনার সিনেমা দেখার জন্যই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়।

Link copied!