সংগীতশিল্পী তাহসান খানের গানের ক্যারিয়ার তার সুর-ছন্দের মতোই স্বাভাবিক চলছিল। দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে আসছিলেন; কিন্তু ক্যারিয়ারের রজত জয়ন্তীতে পা রেখেই তার এক ঘোষণা হৃদয় ভেঙে দেয় শ্রোতা-ভক্তদের— কারণ, আর গান করবেন না তাহসান; নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন।
সেদিন তাহসানের এই ঘোষণায় তার লাখো ভক্তের হৃদয় ভাঙে ঠিকই; কিন্তু গায়কের নিজস্ব সিদ্ধান্তের প্রতিও সম্মান জানাতে অটল থাকেন কেউ কেউ। তবে ভক্তদের অনেকেই চাচ্ছিলেন— আরও কিছুদিন তাদের মাঝে থাকুক, মঞ্চ মাতিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করুক।
সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে একাধিক পারফর্ম ছিল তাহসান খানের। তখন তিনি জানান, এটি তার শেষ ট্যুর; ধাপে ধাপে পুরোদমে গান থেকেই সরে আসবেন গায়ক। তবে তাহসান বলেছিলেন, ঢাকায় কিছু কাজ বা ইভেন্টে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার; এরপরই গুটিয়ে নেবেন নিজেকে।
তার কয়েক সপ্তাহ পর, ঢাকায় ফিরেই মঞ্চে সেই চিরচেনা রূপেই দেখা মিলল তাহসানকে। কখনো বসে পিয়ানো বাজিয়ে, আবার কখনো হাতে মাইক নিয়ে স্টেজে দাঁড়িয়ে— টিম তাহসান-এর সঙ্গেই গাইলেন; শ্রোতাদের মন জয় করলেন।
গত রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি প্রযুক্তিভিত্তিক ইভেন্টে যোগ দিয়েছিলেন এই গায়ক। যেই প্রতিষ্ঠানটির ইভেন্ট, সেই প্রতিষ্ঠানেরই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তাহসান। সেখানে উপস্থিত আয়োজক ও অতিথিদের কয়েকটি গান গেয়ে শোনান তিনি। তাই ভক্ত শ্রোতাদেরও প্রশ্ন জাগে, এটাই কি তবে তাহসানের শেষ পারফর্ম হতে যাচ্ছে?
পারফর্মের পর এক বক্তৃতায় উপস্থাপকের এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হন তাহসান। গায়ককে প্রশ্ন ছোড়া হয়, আপনি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে আছেন। আমরা সবাই জানি, আপনার ভক্তরা জানেন, আপনি নিজেও হয়তো জানেন হয়তো; আপনি ঘোষণা করেছেন যে আপনি গান থেকে সরে আসছেন। আমি নিশ্চিত আপনার ভক্তরা এতে হৃদয় ভেঙেছেন। আপনি কি এ বিষয়ে কিছু বলতে চান? এটা কি সত্যি, এটা কি আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত?
জবাবে তাহসান তার সিদ্ধান্ত এবং এর পেছনের ভাবনা ব্যাখ্যা করেন। তাহসান বলেন, আমি নিশ্চিত নই যে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য এটি সঠিক মঞ্চ, কারণ মানুষ মঞ্চে আমার বলা কথার কেবল অংশবিশেষ নেয় এবং তা দিয়ে আরেকটি খবর তৈরি করে ফেলে। তাই আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হয় যে আমি কী বলছি। তবে একটি বড় বিষয় বলব— অনেক বছর আগে আমার ভাই আমাকে বলেছিলেন যে, সঙ্গীতশিল্পীদের জন্য মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে সময়কাল খুব সীমিত। কেন তুমি ঝুঁকি নিচ্ছ? আমি তখন লিভার ব্রাদার্সের চাকরি ছেড়ে প্রথম অ্যালবামের কাজ ধরেছি।
তাহসান বলেন, আমার ভাইয়ের কথা ছিল, যেকোনো শিল্পীর মেয়াদকাল খুব কম। তুমি এই এরিয়াতে গেলে আবার তো ফেরত আসতে পারবে। সো আমি এটিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলাম; যে আর্টিস্টের মেয়াদকাল কমও হতে পারে, কিন্তু আর্টিস্টকে তৈরি করা ‘আর্ট’ এর মেয়াদ তার বিদায়ের পরও থাকতে পারে।
তাহসান আরও বলেন, আমার মনে হয়েছে যে আমি ততটুকু সময়ই কাজ করব যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের ভালোবাসার শিখরে থাকব, মানুষের সেই ভালোবাসাটা পাবো। কারণ আমি দেখেছি যে অন্য ক্যারিয়ারে রিটায়ারমেন্ট আসে। কিন্তু এই ক্যারিয়ারটায় যেটা হয়, একটা সময় মানুষ ভুলে যায়। সো ভুলে যাওয়ার ক্ষতটার চেয়ে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নেওয়াই বেটার।