দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘মুজিব আমার পিতা’ মুক্তি পাচ্ছে ১ অক্টোবর। এর আগে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কিউরেটর ড. এন আই খানসহ আরও অনেকে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও নির্মাণ মাধ্যম পরিবর্তন হচ্ছে। গত দুই দশকে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই অ্যানিমেটেড সিনেমার গুরুত্ব অপরসীম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমন দেখেছেন সেটার ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে।”
সিনেমার হলের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সিঙ্গেল স্ক্রীন বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতের বোম্বেতে ৪০টির মতো সিঙ্গেল স্ক্রীন সিনেমা হল বন্ধ হয়েছে। হলিউডের তুলনায় বলিউডে অনেক সিনেমা মুক্তি পায়। সেখানে নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স আসছে। আমাদের দেশেও একইচিত্র। স্টার সিনেপ্লেক্স ৪টি সিনেপ্লেক্স বানিয়েছে। তারা আরও ৫০টি সিনেপ্লেক্স বানাবেন আশাকরি।
তিনি আরও বলেন, “মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন শুধু সিনেমা দেখতেই আসে না। তারা আউটিং করতে আসে। আজ থেকে দুই দশক আগে গ্রামে কাউকে দাওয়াত দেয়া হলে মাটির চাটাইয়ে বসিয়ে খাবার দেওয়া হতো। এখন খাবার যতোই ভালো হোক চাটাইয়ে বসে খাবার দিলে খাবে না। সিনেমার অবস্থাটাও তাই। সেকারণে সিঙ্গেল স্ক্রীন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউ যদি সিনেপ্লেক্স করতে চায় তাহলে পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। গ্রামে সিনেপ্লেক্স করা হলে চার দশমিক ৫ শতাংশ হারে ঋণ দেওয়া হবে। আমি চাই সারাদেশে আরও সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্স হোক। কারণ, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড না থাকলে তরুণরা বিপথে চলে যাবে। ”
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল আইসিটি বিভাগ থেকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের শিশু-কিশোর, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর, তারুণ্য, ব্যক্তিত্ব, পরিবার ও রাজনৈতিক জীবনকে তুলে ধরা। এজন্যই আমরা এই অ্যানিমেটেড সিনেমার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এই উদ্যোগ কখনোই সফল হতো না যদি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সন্তান আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা না দিতেন। শুধু তাই নয়, পুরো প্রক্রিয়াটা তত্ত্বাবধায়ন না করতেন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি। এটি পরিচালনা করেছেন সোহেল মোহাম্মদ রানা।
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রোলেন্সার স্টুডিওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— ১৬ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন সিনেপ্লেক্সে ও সিনেমা হলে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে।
অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রটি তৈরি করতে প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি দল কাজ করেছে। এক শ জনেরও বেশি শিল্পী চলচ্চিত্রটি নির্মাণে অবদান রেখেছেন। ব্যাপক গবেষণা এবং চিত্রনাট্য তৈরির পর গত বছরের জানুয়ারিতে এর প্রযোজনার কাজ শুরু হয়।
চলচ্চিত্রটিতে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, রাজনৈতিক কর্মজীবন এবং তার জীবনের অন্যান্য দিক তুলে ধরা হয়েছে। মূলত বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে চলচ্চিত্রটি।