লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) যাচ্ছে ইটভাটার পেটে।
এতে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে উৎপাদন কমছে কৃষি জমির। আবার উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে ৪-৬ বছর সময় লাগে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এভাবেই কৃষকের উর্বর জমিতে সোনালি সফল ফলানোর স্বপ্ন পুড়ছে ইটভাটার আগুনে।
লালমনিরহাট সদরসহ আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় মোট ৪৭টি ইটভাটা রয়েছে।
ওই ইটভাটার হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১০টি ইটভাটার কোনো লাইসেন্স নাই। ১৮টি ইটভাটার রিট পিটিশন রয়েছে। বাকী ইটভাটাগুলো হালনাগাদ আছে। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য বছরে প্রায় ১ হাজার বিঘা উর্বর কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সচেতনতামূলক প্রচারণার অভাবে উপরিভাগের মাটি বিক্রি বা স্থানান্তরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জমি ও ইটভাটার মালিকেরা জানেন না। তাই প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকরা উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করেও থেকে যাচ্ছেন শাস্তি ও জরিমানার বাইরে। কিন্তু ইটভাটার জন্য টপ সয়েল ব্যবহারের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ভাটায় আবাদী জমির মাটি ব্যবহার করলে স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করতে পারবেন। তবে অনুমোদিত ইটভাটাগুলো অনুমতি সাপেক্ষে পুকুর, খাল-বিল ও ডোবার মাটি ব্যবহার করতে পারবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমি থেকে শ্রমিকরা ট্রাক্টরে করে মাটি ভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। ভ্যানে করেও জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, “জৈব উপাদান সংবলিত মাটি কেটে নিলে বা কোনোভাবে নষ্ট হলে, তা কৃষি ও পরিবেশের জন্য প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। জেলার ৪৭টি ইটভাটার বিপরীতে জেলার কমপক্ষে ১ হাজার বিঘা কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ভাটায় চলে যাচ্ছে।”
তবে এটা ঠেকাতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলেও তিনি দাবি করেন।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বিধি অনুযায়ী টপ সয়েল ইটভাটায় ব্যবহারের সুযোগ নেই। আবার বিধি মতে জমির মালিক জমির মতো মাটিও বিক্রি করতে পারবেন। ইটভাটার মালিকপক্ষ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টপ সয়েলের মাটি কিনে নিচ্ছেন। তবে ইটভাটাগুলোতে শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও তিনি জানান।