• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

রূপপুর স্টেশনের যাত্রা শুরু : বদলে যাবে ঈশ্বরদীর অর্থনৈতিক অবস্থা


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৯:৫৫ পিএম
রূপপুর স্টেশনের যাত্রা শুরু : বদলে যাবে ঈশ্বরদীর অর্থনৈতিক অবস্থা

আমদানিকৃত পণ্য খালাসের বিশাল ইয়ার্ড সুবিধা নিয়ে রেলওয়ে পাকশী বিভাগের অধিনে রূপপুর স্টেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাঁশি বাজিয়ে ও রেলওয়ের সবুজ পতাকা নাড়িয়ে রেলওয়ের ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর, জয়দেবপুর ও আখাউড়ার শশীদল স্টেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই তিন স্টেশনের দুটি থেকে যাত্রীবাহী ও রূপপুর স্টেশন থেকে মালবাহি ট্রেন ছেড়ে যায়।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প নির্মাণাধীণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী মালামাল ও যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে রূপপুর প্রকল্পে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও চাহিদা অনুসারে রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে ৩৩৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে রূপপুর ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এই প্রকল্পের অধিনে প্রায় ২২ দশমিক ২ কিলোমিটার মূল লাইন, ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার লুপ লাইন, ১৩টি লেভেল ক্রসিং গেট, একটি #৩৯;বি#৩৯; শ্রেণির স্টেশন ভবন, একটি প্লাটফর্ম, সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন প্লাটফর্ম উঁচুকরণ, ইন্টারলকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, আধুনিক টয়লেট নির্মাণ ও লোকোমোটিভ কারখানায় ডগপিট নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক ও রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুল হক বলেন, “রূপপুর স্টেশন চালু হওয়ায় ঈশ্বরদী ইপিজেডের প্রস্তুতকৃত মালামাল কন্টেইনারের মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে সরাসরি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পৌঁছানো যাবে। ইপিজেডের বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যগুলোও খুব সহজেই ঈশ্বরদী ইপিজেডে আনতে পারবে। শুধু তাই নয় রূপপুরসহ ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কোম্পানির মালিকরা কম সময়ে, স্বল্প খরচে এবং খুব সহজে আনা নেওয়া করতে পারবে।”

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, “ঈশ্বরদী ইপিজেডসহ বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে নানা ধরণের পণ্য এনে চট্রগ্রাম, মংলা বন্দরে আনলোড করে সড়ক পথে নিয়ে আসেন। এতে খরচ বেশি হয়। সময়ও বেশি লাগে। তাছাড়া যারা ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাথর, কয়লা, ভুট্টা, গম, ডাউলসহ বিভিন্ন ধরণের খাদ্যশস্য রেলপথে ঈশ্বরদীতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেসব পণ্যগুলো আনলোড করার মতো বড় ইয়ার্ড ঈশ্বরদীতে ছিল না। তাই ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা বিভিন্ন পণ্যবাহী কোচ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে আনলোড করা হতো। সেখান থেকে সড়কপথে সেসব পণ্য গন্তব্যস্থলে আনা হতো। এতে খরচ ও সময় বেশি লাগতো। ভোগান্তিতেও পড়তে হতো। সেই কারণে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ঈশ্বরদীতে বড় ইয়ার্ড করানোর জোড়দাবি ছিল। রূপপুর স্টেশন চালু হওয়ায় ইপিজেডের বিভিন্ন কোম্পানি ও ঈশ্বরদীর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সেই দাবি পূরণ হলো।”

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, “ভারত থেকে বাংলাদেশে একটি রেক এলে পাকশী রেলওয়ে রাজস্ব পায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। রূপপুর স্টেশনটি চালু হলে এখানে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। তাই রেকগুলোর রূপপুরে আনার চাহিদা বাড়বে। এতে মাসে ৭-৮ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া সম্ভব হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুব্যবস্থা হবে।”

অসিম কুমার আরও বলেন, “জনগণের চাহিদা থাকলে আগামীতে কমিউটার ট্রেনটি রূপপুর স্টেশন থেকে ছাড়া যায় কি না তা লিখিতভাবে রেল ভবণের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদীর রূপপুর স্টেশনে পাবনা-৪ সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, রেলওয়ে পাকশী জেলার পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন, পাবনা পুলিশ সুপার আকবার আলী মুন্সি, রেলওয়ের রাজশাহী ও পাকশী বিভাগীয় কর্মকর্তারা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃরা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!