• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

কোন অমঙ্গলের ভয়ে জনশূন্য মঙ্গলপুর গ্রাম?


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ১১:৩৮ এএম
কোন অমঙ্গলের ভয়ে জনশূন্য মঙ্গলপুর গ্রাম?
৮০ বছর ধরে জনশূন্য মঙ্গলপুর গ্রাম

একটা সময় লোকে লোকারণ্য ছিল গ্রামটি। এখন সে গ্রাম জনশূন্য। গ্রামে মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু ছিল। সব সুবিধা থাকলেও মানুষ এখন আর বসবাস করে না সেই গ্রামে। জনশূন্য এই গ্রামের নাম মঙ্গলপুর। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নে এই গ্রামের অবস্থান।

লোকমুখে শোনা যায়, মঙ্গলপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল। ওই গ্রামের জমিদারের নাম ছিল মঙ্গল পাঠান। তার নামেই গ্রামের নাম। মঙ্গল পাঠান ছিলেন অত্যন্ত প্রতাপশালী। ওই গ্রামে তিন একর জমি নিয়ে বিশাল এক বাড়ি ছিল জমিদার মঙ্গল পাঠানের। মঙ্গল পাঠান মারা যাওয়ার পরে জমিদারি হারিয়ে যায়। তার সমাধি এখনো আছে মঙ্গলপুর গ্রামে। তবে সেই বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাড়ির চারদিকে করা ৩০-৪০ ইঞ্চি চওড়া মাটির প্রাচীরেরও অস্তিত্ব নেই।

গ্রামের নাম মঙ্গলপুর হলেও একসময় যেন অমঙ্গল ভর করেছিল এ গ্রামে। এ কারণে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন গ্রামের বাসিন্দারা। এরপর আনুমানিক ৭০ থেকে ৮০ বছর পার হলেও ফেরেননি তারা। এখনো গড়েও ওঠেনি কোনো বসতি।

এলাঙ্গী গ্রামের দাউদ হোসেন (৭০) জানান, “বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছি এই গ্রামে সব জাতির  বসবাস ছিল। গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ছিল। তারা অনেকেই পাশের গ্রামে চলে যায়। তবে কেন তারা চলে গিয়েছে, তা সঠিক বলতে পারব না। গ্রামে এখনো কয়েকটি পুকুর ঈদগাহ আছে।”

বলাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৭৪) বলেন, “আমরা জানি যে এই গ্রামে বারো জাতির বাস ছিল। কীভাবে তারা উচ্ছেদ হয়ে গেল, তা আমরা বলতে পারিনে। শুনেছি যে মঙ্গলরা বাস করত। তাদের বাড়ির এরিয়াই প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত। তাদের মহিলারা বাইরে বের হতেন না। এলাকার কারা নাকি সেই প্রাচীর বেয়ে উঠে মঙ্গলদের মহিলাদের দেখেছিল। সেই কারণেই তারা এক রাতেই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। এখন এই গ্রামে তেমন কিছুই নেই।”

বাহাজ্জেল মণ্ডল নামে একজন জানান, এই গ্রামে এখনো একটা ঈদগাহ আছে। বহু লোক মানত করে রোগ মুক্তির জন্য। রোগব্যাধি থেকে মুক্তিও হয়। তবে আগে ঈদগাহ ছিল না। আমাদের সামনেই হয়েছে। বহু আগে থেকেই এখানে দরগা ছিল। দরগায় এখন প্রায় সময় লোকজন আসে।

এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর খান জানান, এলাকাতে তেমন বয়স্ক মানুষ বেঁচে না থাকায় মঙ্গলপুরের প্রকৃত ইতিহাস এখন আর কেউ বলতে পারবে না।

সম্প্রতি জনশূন্য মঙ্গলপুরে বসতি স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গ্রামটিতে ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে। 

Link copied!