দীর্ঘ ৪ মাস ১২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে নামেন জেলেরা। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ ঘাটে দেখা যায়, জেলেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ নিয়ে ঘাটে এসেছেন। প্রথম দিনেই বেশিরভাগ কাচকি, চাপিলা মাছ ধরা পড়েছে এবং অধিকাংশ মাছের আকার ছোট। ব্যবসায়ীরা জেলেদের থেকে মাছ বুঝে নিয়ে বিএফডিসিকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে।
জেলে মতিলাল বলেন, “আমাদের খুব ভালো লাগছে। প্রথম দিনেই যথেষ্ট ভালো মাছ পাচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় এক জালে ১০ ড্রামেরও অধিক মাছ পেয়েছি। এ অবস্থা থাকলে সামনে আরও বেশি মাছ পাব বলে আশা করছি।”
মাছ ব্যবসায়ী মো. জাফর ইকবাল বলেন, “এ বছর দীর্ঘ চার মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকা ও পানির স্তর বৃদ্ধির কারণে ভালো মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রথম দিনেই অধিকাংশ মাছের আকার কিছুটা ছোট হলেও সামনে ভালো মাছ পাওয়া যাবে।“
জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, “সরকারি নিদের্শনা প্রত্যাহারের পর আজকে প্রথম দিন কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। জেলেরা ভালো মাছ পাচ্ছে। আমরা সকল ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীরা মিলে সরকারকে রাজস্ব প্রদান করছি। আমরা আশাবাদী বাজারদর ঠিক থাকলে আমাদের মৎস্য আহরণ ভালো হবে এবং জেলে ও ব্যবসায়ীরা দাম ভালো পাবে।”
বিএফডিসি সূত্রে জানা যায়, সাধারণত ১ মে থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও এ বছর গত ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় সে নিষেধাজ্ঞা ১৯ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লেও মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়ায় সেই নিষেধাজ্ঞা আরও ১২ দিন বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণন কেন্দ্রে ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, “দীর্ঘ ৪ মাস ১২ দিন পর আজ (১ সেপ্টেম্বর) থেকে কাপ্তাই লেকে মৎস্য আহরণ শুরু হয়েছে। সকাল থেকে বেশ ভালো পরিমাণে মাছ এসেছে ঘাটে। এছাড়া বাকি তিনটি ল্যান্ডিং স্টেশনেও একই রকম মাছ আসার খবর পেয়েছি। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী আমাদের লক্ষ্য মাত্রা অনুযায়ী মৎস্য উৎপাদন ও রাজস্ব আহরণ হবে।”
উল্লেখ্য, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন ২৫ হাজারেরও বেশি জেলে। মাছ শিকার বন্ধকালীন জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০ কেজি করে চাল খাদ্যসহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়।