• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রথমে মামাতো বোন, তারপর মামি ও মামাকে খুন করেন রাজীব


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম
প্রথমে মামাতো বোন, তারপর মামি ও মামাকে খুন করেন রাজীব

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রিপল মার্ডারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ঘটনায় রাজিব ভৌমিক (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে তাড়াশ উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার কর হয়।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে মামা-ভাগনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে রাজীব এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। প্রথমে রাজীব হাঁসুয়া দিয়ে মামাতো বোন, পরে মামি ও সবশেষে মামাকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

রাজীব কুমার ভৌমিক উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে।  

পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে তাড়াশের গোপালজিউ মন্দিরের পাশের একটি ফ্ল্যাট থেকে বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৩৫) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির (১৫) গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত স্বর্ণা রানী সরকারের ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, “ঘটনার পরই ভিকটিম বিকাশ ও তার ভাগিনার মধ্যে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও পাই। এখান থেকেই আমরা ক্লু পেয়ে যাই। দুপুরের দিকে নিশ্চিত হই যে এ হত্যাকাণ্ডে ভাগিনা রাজীব জড়িত। এরপর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘটনার দায় স্বীকার করেন তিনি। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর পরই একে একে তিনজনকে হত্যা করেন তিনি।”  

পুলিশ সুপার বলেন, রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাবার মৃত্যুর পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন রাজীব। রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন বিকাশ। ব্যবসা করে রাজীব তার মামাকে ধাপে ধাপে লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু রাজীবের কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ। তিনি গত ২২ জানুয়ারি ওই টাকা সাতদিনের মধ্যে ফেরত দিতে রাজীবকে চাপ দেন এবং তার বোন অর্থাৎ রাজীবের মা প্রমীলা রানীকে ফোনে বকাবকি করেন। রাজীব টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে কষ্ট পাওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।  

খুনের বর্ণনায় রাজীব জানিয়েছেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন ২৭ জানুয়ারি সাড়ে তিন কেজি ওজনের একটি লোহার রড ও একটি হাঁসুয়া সংগ্রহ করেন। বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বাসায় আসতে চান। বিকাশ সরকার তাড়াশের বাইরে কাটাগারি বাজার এলাকায় ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন। তিনি টাকা নিয়ে বাসায় এসে থাকতে বলেন। রাজীব যথারীতি বাসায় আসেন। মামি স্বর্ণা রানী তখন রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য তিনতলার বাসা থেকে নিচের দোকানে কফি আনতে যান। সেই সুযোগে রাজীব মামাতো বোন পারমিতা সরকার তুষির কক্ষে গিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তুষি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে তার স্বর্ণা কফি কিনে বাসায় ঢুকলে তাকেও পেছন থেকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন রাজীব। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও রড দিয়ে আঘাত করার পর গলা কেটে হত্যা করেন। এরপর মামি ও মামাতো বোন গোঙাতে থাকলে তাদেরও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। তিনজনের মৃত্যুর পর তাদের মরদেহ টেনে বেডরুমে রেখে প্রধান দরজায় তালা মেরে পালিয়ে যান রাজীব।  

পুলিশ সুপার বলেন, রাজীবের দেওয়া তথ্য মতে, তাড়াশে উৎপল কর্মকারের পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রড ও তার বাড়ি থেকে হাঁসুয়া জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রে পাওয়া রক্তের নমুনা সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Link copied!