এবারের কোরবানির ঈদে শেরপুরের প্রায় ৪০ হাজার পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে। সারা বছর লালন-পালন করে অবশেষে বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। তারা বলছেন, কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় পশু বিক্রি করতে পারেননি।
অন্যদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন অবিক্রিত পশু সারা বছর নানা দিবস ও অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বিক্রি হয়ে যাবে। এতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন খামারিরা।
জেলার সদর উপজেলার চরশেরপুর এলাকার গরুর পাইকার হামিদ মিয়া বলেন, এবার জেলায় কোরবানির জন্য প্রায় ৯০ হাজার পশু প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৪০ হাজার পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে।
তিনি জানান, তার পাঁচটা গরু বিক্রির জন্য ঢাকায় নিয়েছিলেন। ক্রেতারা দাম কম বলায় ৪টা ফেরত এনেছেন।
সদর উপজেলার লছমনপুরের জিহান ডেইরি ফার্মের মালিক রেহানা ইদ্রিস ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেড়শটি বড় ষাড় গরু প্রস্তুত করেছিলেন। আশা ছিল ষাড় বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে লাভবান হবেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায় ঢাকার ভাটারার সাঈদ নগর গরুর হাট ও মিরপুর গরুর হাটে ষাড়গুলো নিয়ে যান। ১০দিন অপেক্ষার পর কম দামে ২৭টি গরু বিক্রি করেন। বাকি ১২৩টি গরু ফেরত আনতে হয়। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন এই খামারি।
জিহান ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার মুকুল হোসেন বলেন, “মালিকের ব্যাপক লোকসান হয়েছে। বাজারে এবার গরুর দাম কম ছিল। আর আশানুরূপ বিক্রিও করতে পারে নাই। বিক্রির আশায় শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ক্রেতারা গরুর দামই করে না। কম দামে ২৭টি গরু বিক্রি করে আসা যাওয়ার খরচটা তুলে এনেছি।“
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্য বারের তুলনায় এবার জেলায় কম পশু কোরবানি করা হয়েছে। ঢাকাসহ অন্য স্থানে শেরপুরের পশু তেমন একটা বিক্রি হয়নি। চাহিদার চেয়ে বেশি গরু হাটে আসায় অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। তাই অনেকেই হতাশ হয়ে পশু বিক্রি না করে বাড়ি ফেরত নিয়ে গেছেন।
সদর উপজেলার কামারেরচর গ্রামের গরু খামারি হারুন বলেন, “আশা করে দুইডা গরু পালছিলাম। ঢাকা নিয়া তো একটাও বেচবার পাই নাই। উল্টা ঢাকা যাওয়া-আসার খরচ হইলো।”
খোয়ারপাড়ের হযরত বলেন, “এবার বড় গরুর দাম একেবারে কম গেছে। আমার গরুটা তিন লাখ টাকা হইতো। কিন্তু শেষের দিন দুই লাখ টাকাতেই দিয়া দিছি। এতে আমি অনেক লোকসানে পরে গেছি।”
জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদে জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে কোরবানির জন্য ৫৬ হাজার ৪৪৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়। আর জবাই করা হয়েছে সাড়ে ৫৪ হাজার পশু। জেলার মোট ২৫টি হাট ও পাঁচটি অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য নানাভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছিল।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এবার ৪০ হাজারেরও বেশি কোরবানির পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে। আশা করছি অবিক্রিত পশুগুলো আগামী নানা দিবস ও অনুষ্ঠানে বিক্রি হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “সারা বছরই মাংসের একটা চাহিদা আছে। তাই খামারি ভাইদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।”
আপনার মতামত লিখুন :