• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

‘জীবিত হওয়ার আশায়’ ছয়দিন খাটের নিচে রাখা হলো মরদেহ


নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩, ০৮:০১ পিএম
‘জীবিত হওয়ার আশায়’ ছয়দিন খাটের নিচে রাখা হলো মরদেহ

নরসিংদীর মনোহরদী পৌর এলাকায় ‘জীবিত হওয়ার আশায়’ ছয়দিন খাটের নিচে স্ত্রীর মরদেহ রেখে জিকির করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার (৬৮) ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় মোক্তার উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার ৪ মেয়ে মৃত শামীমা সুলতানা নাজমার (৫৫) মরদেহ খাটের নিচে রেখে পুনরায় জীবিত হওয়ার আশায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই ছয়দিন বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। পরে লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, মেয়ে মাহবুবা তালুকদার (৪০) রোকসানা তালুকদার (৩৪), আফরোজা তালুকদার (২৮), নিষাদ তালুকদার (২৫) ও তাদের দুই নাতি ও এক নাতনি। এই পরিবারের সবাই শিক্ষিত। চার মেয়ের তিনজনই অনার্স পাস ও একজন অধ্যয়নরত। তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে বের হতেন না। নিজেরাই বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোনো সুদত্তর দিতেন না। তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন।  

স্থানীয়রা জানান, শামীমা সুলতানা নাজমা মারা যাওয়ার আগে তার পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন তিনি যদি কোনো সময় মারা যান তাহলে তার লাশ রেখে যেন অপেক্ষা করা হয়। তিনি তিন থেকে চারদিন পর পুনরায় জীবিত হবেন। গত সোমবার (৫ জুন) শামীমা সুলতানা নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি কাউকেই জানায়নি। তারা মায়ের জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন।  

এদিকে প্রতিবেশীরা পচা গন্ধ পেতে থাকেন। তারা ভাবেন ইঁদুর মরে গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে গন্ধ তীব্র হওয়া এবং নাজমার বাড়ির লোকদের রহস্যজনক চলাচলের কারণে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে গেলে দেখা যায় তারা সবাই ঘরেই অবস্থান করছেন। এ সময় খাটের নিচ থেকে নাজমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় রোববার মরদেহ অবমাননা করার অভিযোগে নিহতের বোন রুমানা সুলতানা বাদী হয়ে মোক্তার উদ্দীন তালুকদারকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করলে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর মেয়েদের স্বজনদের জিম্মায় দিলে তারা উপজেলার চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের অর্জুনচর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। আর গতকাল রাতে মরদেহ দাফন করা হয়।

নিহতের প্রতিবেশী জেলা পরিষদের সদস্য ইসরাত জাহান তামান্না বলেন, “তারা সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে বাড়িটিতে অবস্থান করতেন। কারও সঙ্গে দেখা করতেন না, কথাও বলতেন না। তাদের আচরণ আমাদের কাছে রহস্যজনক লাগতো। পুলিশসহ আমরা বাড়িটিতে যাওয়ার পরও তারা গেট খুলছিলেন না, ছাদও ছিল তালাবদ্ধ। তখন বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায় খাটের নিচে তোষকে মোড়ানো মরদেহ। তীব্র দুর্গন্ধের মধ্যেই তিন শিশুসহ তারা আটজন সেখানে অবস্থান করছিলেন।”

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, মরদেহ অবমাননা করার অভিযোগে নিহতের বোন রুমানা সুলতানা বাদী হয়ে মোক্তার উদ্দীন তালুকদারকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় রোববার তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা দাফন সম্পন্ন করেন। মেয়ে ও নাতি- নাতনিদের স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

Link copied!