সড়কপথে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর যাতায়াতের একমাত্র পথ নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক। এবার ঈদে মহাসড়ক প্রশস্ত হওয়ায় স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৮ জেলার মানুষ।
এর আগে, সড়কটি সরু হওয়ায় দু’টি যানবাহন অতিক্রম করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ফলে চালকদের সামান্য অসতর্কতাতেই ঘটতো দুর্ঘটনা। তবে, এখন আর সেই চিত্র নেই। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সরকার নাটোর-বগুড়া ৬২ কিলোমিটার মহাসড়ক ৭০৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৪ ফুট চওড়ার উদ্যোগ নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাটোর শহর থেকে খেজুরতলা পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষের দিকে। মাদরাসা মোড় থেকে দিঘাপতিয়া পর্যন্ত সড়কের মাঝখানে ডিভাইড বসানোর কাজও শেষ পর্যায়ে। এক সময়ের সরু সড়কটি যেন নতুন রুপ পেয়েছে।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের প্রস্থ ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুট করার কাজ শুরু হয়। ২ জেলায় ৬২ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ৩১ কিলোমিটার নাটোরে ও বাকি অংশ বগুড়ায়। এর মধ্যে নাটোর শহরের মাদরাসা মোড় থেকে উত্তরা গণভবন পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক উভয়পাশে ফুটপাত কাম ড্রেন এবং মাঝে মিডিয়ানসহ চার লেনে পরিণত করা হচ্ছে। নাটোরের ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের মাদরাসা মোড় থেকে কৃষ্ণপুর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এবং ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষ্ণপুর থেকে শেরকোল ব্রিজ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার নির্মাণ কাজ চলমান।
বাস চালক মশিউর রহমান জানান, তিনি ১২ বছর ধরে এ মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চালান। এক সময় সরু মহাসড়কে বাস চালাতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হতো। বর্তমানে সড়কটি চওড়া হয়েছে। ফলে আগে নাটোর থেকে বগুড়া যেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট লাগে।
ট্রাকচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ট্রাকে সবজি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাতাযাত করি। আগে সড়কটি খুবই বিপদজনক ছিল। অনেক কষ্ট হতো এ সড়কটি দিয়ে ট্রাক নিয়ে যাতাযাত করতে। এখন খুব দ্রুত সময়ে সবজি নিয়ে পৌঁছাতে পারি। সড়কটি সংস্কারের ফলে আমরা খুবই উপকৃত হয়েছি।”
মিজানুর রহমান নামে এক বাসযাত্রী বলেন, “নাটোর থেকে বগুড়া যেতে অনেক সময় লাগত। এখন রাস্তাটি নিমার্ণের ফলে কম সময়ে যেতে পারছি।”
বাসের যাত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, “সড়কটি নির্মাণের ফলে কম সময়ে বাচ্চারা কলেজে যেতে পারে। আমরা সঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারছি। আগে অনেক গর্ত আর খানাখন্দে চলাচল করাই যেত না। বাড়ি পৌঁছাতে অনেক দেরি হতো। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তো। এখন চকচকে চওড়া রাস্তা হয়েছে। সহজে অফিসে যেতে পারছি। সময়ও কম লাগছে।”
এ বিষয়ে নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান সরকার বলেন, “নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের প্রস্থ ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে। নাটোর শহর থেকে খেজুরতলা পর্যন্ত সড়কের কাজ প্রায় ৭০% হয়েছে। অন্যদিকে শেরকোল সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও সিংড়া অংশে সড়কের চার লেনের দুইটি প্যাকেজের দরপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সড়কের নিমার্ণ কাজ শেষ হবে।”
আপনার মতামত লিখুন :