• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২২, ১১:১৩ এএম
সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে সাড়ে ছয় কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠাকে বার বার চিঠি দেওয়া হলে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতেও কাজ শুরু হয়নি। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর খাঁজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এর পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ১৭টি প্যাকেজে গত মার্চ মাস থেকে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে থাকে। পানি বাড়ার কারণে গত জুন মাস থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, যমুনা নদীতে পানি বাড়ার কারণে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে বন্যার সতর্কবার্তা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদীর চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। চলতি বছরে যমুনা নদীতে দফায় দফায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলার দক্ষিণে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে।

এবছর নদী ভাঙনে জেলায় প্রায় তিন শতাধিক বাড়িঘর ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রসা ও মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বিশেষ করে এনায়েতপুর থানার জালালপুর ও এনায়েতপুরের আড়কান্দিতে ভাঙনের ভয়াবহতা বেশি দেখা দেয়। ভাঙন কবলিত এসব মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। কেউ খোলা আকাশের নিচে, অন্যের জমি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নেন। জালালপুর আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছ গ্রামের বেশ কয়েকটি ঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙনের জন্য এসব এলাকার মানুষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহেলাকে দায়ী করেন। তাদের দাবি সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু না করায় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

জালালপুর এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। এভাবে নদী ভাঙতে পারে তা আগে কখনো দেখিনি। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল এই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। কাজ শুরু হওয়ার মাঝপথে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেন। বসত ভিটা হারিয়ে অনেকে এখন পথে বসেছে।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, চলতি বছরে সব চেয়ে বেশি নদী ভাঙন হয়েছে জালালপুর এলাকায়। গুচ্ছগ্রামসহ প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। তারা ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কাজ বন্ধ রেখে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।

১১ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এআরসি কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার আকরাম হোসেন বলেন, “এনায়েতপুর বাঁধের কাজ শুরু করার জন্য আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজের জন্য ইতিমধ্যে জমি নেওয়া হয়েছে। পাথর নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। পাথরের দাম বেড়েছে। সেই ঝামেলা শেষ হয়েছে। নদীতে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। পাথর আসলে ব্লক তৈরি করে নদীর তীরে বসানো হবে। চলতি মাসে কাজ শুরু করা পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছরে যমুনা নদীতে দফায় দফায় পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল।”

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বলেন, “চলতি বছরের মার্চ মাসে এনায়েতপুরে সাড়ে ছয় কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু জুন মাসের শুরুতে যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “নদীতে ড্রেজিং করে তীরে মাটি ফেলা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আশা করছি চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।”

এনায়েতপুরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের তদারকির কর্মকর্তা ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেলকুচি-চৌহালী অঞ্চল) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিলটন হোসেন বলেন, “এনায়েতপুর খাঁজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কাজ শুরু করেনি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে কাজ শুরু করা যায়।”

 

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!