• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

‘তারাবির নামাজ শেষে শোনং মোর ঘরত আগুন নাগছে’


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম
‘তারাবির নামাজ শেষে শোনং মোর ঘরত আগুন নাগছে’

‘সারাদিন রোজা থাকি, সন্ধ্যা বেলা ইফতার করি মোর স্বামী নামাজ পড়ব্যাড় গেছিল। মুই গেছিলুং পাশের বাড়িত নামাজ পড়ব্যার। ছওয়া দুইটা ঘরত পড়া পড়ছিল। তারাবির নামাজ শেষে শোনং মোর ঘরত আগুন নাগছে। শোগ পুড়ি শ্যাষ হইছে।’ অসুস্থ অবস্থায় কান্না এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কাঠমিস্ত্রি হোসেন আলীর স্ত্রী ছবিনা বেগম।

বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই পরিবারটি। আগুনে বাড়িঘরসহ সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় শোকে বাকরুদ্ধ হয়েছেন ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক হোসেন আলী।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাত পৌনে ৯টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বকসীপাড়া (কাদো পাড়া) গ্রামে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। 
খবর পেয়ে রাতেই কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে ৩টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুড়ে মারা গেছে তিনটি গুরু, তিনটি ছাগলসহ হাঁস-মুরগি। এছাড়াও ঘরে থাকা ধান, চাল, সন্তানের বইখাতা ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার রাতে হঠাৎ ঘরে আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরিবার ও প্রতিবেশী পুরুষরা নামাজে থাকায় বাড়ির নারী সদস্যরা নিরুপায় হয়ে পড়েন। তাদের চিৎকারে আশেপাশের বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

হোসেন আলীর এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে লাবনী আক্তার লিমা বলেন, “আমাদের এখন কিছুই নেই। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের গরু, ছাগল, ধান, হাঁস-মুরগি সব পুড়ে গেছে। আমার ও ছোট ভাইয়ের পড়ার বইগুলোও পুড়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে শুধু পড়নের কাপড়সহ ঘর থেকে বের হয়েছি। কিছুই রক্ষা করতে পারি নাই। আগামী ৭ জুন আমার এইচএসসি পরীক্ষা। কীভাবে পরীক্ষা দেব, কিছু বুঝতে পারছি না। আপনারা আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমরা কোথায় থাকবো, কী খাবো কোনও উপায় নাই।”

খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম ভুক্তভোগী পরিবারকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে মেয়র বলেন, “ওই পরিবার আমার কাছে লিখিত আবেদন করলে তাদেরকে সহায়তা করা হবে।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সইদুল আরিফ বলেন, “বিষয়টি এই মাত্র জানলাম। ভুক্তভোগী পরিবার লিখিত আবেদন দিলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”

Link copied!