সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় সড়কপথকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল ও কলেজ। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। রয়েছে বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি, বিছনাকান্দি পর্যটনকেন্দ্র, গোয়াইনঘাট সদর, পানতুমাইসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। এসব স্থানে যাওয়ার জন্য মানুষকে এই উপজেলার প্রধান সড়ক ব্যবহার করতে হয়।
তবে বর্তমান সময়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সালুটিকর থেকে গোয়াইনঘাটে যাওয়া উপজেলার মূল সড়কটি। সড়কটি প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। উপজেলার প্রবেশমুখ সালুটিকর ব্রিজ থেকে শুরু করে গোয়াইনঘাট সদর উপজেলা পর্যন্ত গেছে এ সড়ক। বর্তমানে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির প্রায় ১৬ কিলোমিটারই ভেঙে গেছে। সড়কটি গত আড়াই বছরে ৭ বার বন্যায় ডুবেছে। তা ছাড়া ১৬ কিলোমিটার অংশের ৭টি স্থানে রয়েছে গভীর গর্ত। আড়াই বছরে কোনো সংস্কার না করায় এ সড়ক এখন বেহাল।
স্থানীয় লোকজন এখন বিদ্রূপ করে এই সড়ককে ‘মরণফাঁদ’ বলেন। যোগাযোগের এই প্রধান সড়ক থেকে কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত। সে কারণে বর্তমান মৌসুমে সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। খানাখন্দে ভরা এই সড়কে তাই ভোগান্তির শেষ নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সর্বশেষ সড়কটির জরুরি সংস্কারকাজ হয়েছিল। এরপর ২০২০ সালে পাঁচ দফা বন্যা হয়। চলতি বছরও দুবার বন্যার কবলে পড়েছে সড়কটি।
মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ সময় পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকার পর গত মাসে সরকার পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিয়েছে। ফলে পর্যটকদের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে বিছনাকান্দি পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের দশা দেখে অনেক পর্যটক গাড়ি ঘুরিয়ে আবার সিলেট শহরের দিকেও ফিরে যান। এতে বিছনাকান্দি পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর ধরে সড়কটি বেহাল। সড়কটি সংস্কারে জনসাধারণের দাবি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তবু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। তারা বার বার আশ্বাস দিয়ে দায় সেরেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের সালুটিকর থেকে দামারি পর্যন্ত অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। নওয়াগাঁও থেকে নন্দিরগাঁও গ্রামের মধ্যে আরও ৫টি গর্ত দেখা গেছে। সোনার বাংলা থেকে তোয়াকুল, বঙ্গবীর পর্যন্ত রাস্তার অধিকাংশ স্থান খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। প্রায়ই এসব গর্তে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি পড়ে যায়। এ কারণে সব ভাঙা স্থানেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকে শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী বিভিন্ন যানবাহন। ফলে জনসাধারণকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন রোগীরা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রহিম বলেন, “এই রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কিন্তু কিছুই করার নেই। পেটের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে অচিরেই রাস্তাগুলো সংস্কার করা উচিত। রাস্তা সংস্কার করা না গেলে আমাদের আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। রাস্তাগুলো জনস্বার্থে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, অযত্নে-অবহেলায় এবং কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাবে সড়কটির এমন দশা হয়েছে। যদি সড়কটি মেরামত বা সংস্কার করে না দেওয়া হয়, তাহলে উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে। তাই সরকারের উচিত জনসাধারণের কথা ভেবে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করে দেওয়া। সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে সড়কের এমন দশা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের কয়েকটি গর্তে বেশ কয়েকমাস পূর্বে মাত্র ৫ ট্রাক ইটের সুরকি দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে ওই রাস্তা সংস্কার না করলে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, “এ সড়ক শুধু গোয়াইনঘাট উপজেলাবাসীর নয় পশ্চিম সিলেটের বাসিন্দাদের যাতায়াতেরও একমাত্র পথ। পাশাপাশি এটি পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ারও পথ। আড়াই বছর ধরে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। এ অবস্থায় সর্বশেষ মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা থেকে সড়কটিতে দ্রুত সংস্কারকাজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
এলজিইডির গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “জরুরি সংস্কারকাজের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার অংশে সংস্কারকাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সড়কটি পর্যটনবান্ধব করতে দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে মরণফাঁদ বলে পরিচিত সড়কটির দুর্নাম ঘুচে যাবে।”