• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মুহররম ১৪৪৬

নির্মমভাবে বাবার চলে যাওয়া, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক ২ সন্তান


বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
নির্মমভাবে বাবার চলে যাওয়া, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক ২ সন্তান
বিলাপ করছেন সোহাগের স্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক তার দুই শিশুসন্তান। ছবি: সংগৃহীত

‘আমাদের এতিম বানাইয়া ফালাইছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে কী নিষ্ঠুরভাবে পাথর দিয়া মারছে। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঢাকার মিটফোর্ড নৃশংসভাবে হত্যার শিকার বরগুনার সোহাগের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সোহান (১১)।

এ সময় তার বড় বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া সোহানা (১৪) পিতৃশোক ধরে রাখতে না পেরে বলে, ‘আমাদের এতিম বানিয়ে দিয়েছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে পাথর দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’

এদিকে স্বামীর কবরের পাশে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী লাকী আক্তার। কবরের মাটি ছুঁয়ে বারবার বলছেন, আমার স্বামীকে কেন এমন নির্মমতার শিকার হতে হলো। আমার ছেলেমেয়েদের এভাবে এতিম হতে হলো। আমি কীভাবে ওদের মানুষ করব? এই নির্মমতার কি কোনো বিচার করবে এই দেশের মানুষ?

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা চাইত হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তারা সহ্য করতে পারছিল না। চাঁদা না দেওয়াতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

মিটফোর্ডে খুন হওয়া ব্যবসায়ী সোহাগের দাফন বরগুনায় সম্পন্ন

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের কাছে গত বুধবার বিকেলে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর শুক্রবার সকালে তার মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত সোহাগ তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার জিনজিরার কদমতলীতে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন নামক এলাকায় বসবাস করতেন।

নিহতের স্বজনেরা জানান, সোহাগের বয়স যখন মাত্র সাত মাস, তখন বজ্রপাতে সোহাগের বাবা আইউব আলীর মৃত্যু হয়। এরপর মা আলেয়া বেগম জীবিকার সন্ধানে সোহাগ ও তার দুই মেয়েসন্তান নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানেই বড় হন সোহাগ। তিনি ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান চালিয়ে আসছিলেন।

স্বজনদের দাবি, ওই দোকান থেকেই মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল কিছু দুর্বৃত্ত। একপর্যায়ে দোকানও তালাবদ্ধ করে দেয় তারা। বুধবার বিকেলে সোহাগকে বাসা থেকে ডেকে নেয় তারা। এরপর আটকে রেখে চাপ প্রয়োগ করা হয় চাঁদা দেওয়ার জন্য। রাজি না হওয়ায় পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে।

এই হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সোহাগের নিজ জেলা বরগুনায় চলছে প্রতিবাদ ও শোক।

শুক্রবার বেলা ১১টায় বরগুনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে মানববন্ধন করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান স্থানীয় লোকজন।

Link copied!