• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৬

কলমিগাড়া বিলে পদ্মের ছড়াছড়ি


আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১, ০৯:৫২ এএম
কলমিগাড়া বিলে পদ্মের ছড়াছড়ি

বিশাল আকাশের নানা রঙের ছড়াছড়ি। জমিনেও পড়েছে তার প্রভাব। চারদিকে সবুজের সমারোহ। মাঝেই থইথই জলের ভেতর থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে বাহারি পদ্মফুল। গোল পাতায় ঢেকে গেছে জলরাশি। সরু লতার মাথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে অসম্ভব সৌন্দর্যের হাতছানি দেওয়া সাদা গোলাপিসহ নানা রং বহন করা বিলের পদ্মফুল। 

দূরদূরান্তই নয়, পথচারী বা যানবাহনের চলাচলকারী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পদ্মের প্রেমে না পড়লে হয়তো তার মন বিকশিতই হবে না। একপলক দেখার জন্য হলেও তাকে নামতে বা মন্থর গতিতে চলতে হবে। 

বলছিলাম পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের সুঁইগ্রামে অবস্থিত কলমিগাড়া বিলের কথা। জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরেই এই অপরূপ সৌন্দর্যের বিলের অবস্থান। আর চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে সবুজে ঘেরা এই গ্রাম। পিচঢালা আর মেঠোপথ পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় প্রত্যন্ত গ্রামের এই কলমিগাড়া বিলটিতে। এ যে বাংলা ব্যাকরণের বাগধারার মতোই গোবরে ফুটেছে পদ্ম ফুল। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এই দুটি সময়ে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে ওঠে। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন এ বিলের পাড়ে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শেষ প্রান্তে কলমিগাড়া বিল। একটি বাড়ির মাঝখান দিয়ে বিলের পাড়ে ধানক্ষেতের কিনারে পৌঁছে দেখা গেল ডিঙি নৌকায় মাছ শিকারে ব্যস্ত স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবী মানুষ। তাদের মধ্যেই কথা হলো কৃষক হারুন আলীর সঙ্গে। তার সহযোগিতায় ডিঙি নৌকায় বিলের মাঝখানে যাওয়ার পর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঝিরি ঝিরি বাতাসে হারিয়ে যায় হৃদয় নামের একটি অদৃশ্য ছায়া। প্রবেশ করা হয় ভালো লাগা আর অনুভূতির একটি ভিন্ন জগতে। চারপাশে ফুটে আছে বিক্ষিপ্ত প্রকৃতিগত পদ্ম ফুল। কোনোটি আবার অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে শরীরে শিহরণ খেলে যায়। বিলের চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত আর মাঝখানে সাদা-গোলাপি রঙের পদ্ম ফুল তৈরি করেছে অন্য রকম সৌন্দর্য। সূর্যাস্তের সঙ্গে পদ্মফুলের রং, রূপ তৈরি করে মোহনীয় আবেশ। এ এক অপরূপ সাজে পদ্মবিলের প্রকৃতি। দোলা দেয় মনের ভেতরে ভালো লাগার অন্য রকম অনুভূতি। 

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রকৃতি মনোরম পরিবেশ দিয়েছে। দিয়েছে সৌন্দর্য। কিন্তু কিছু সমস্যা থেকে যায়। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে যোগাযোগের এক মারাত্মক রকম দূরত্ব রয়েছে। বিলে যাতায়াতের তেমন ব্যবস্থা নেই। ডিঙি নৌকায় দুজনের বেশি ওঠা যায় না। আর প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে ওঠা পদ্মবিলের মাঝে মাঝে কচুরিপানা ও অন্যান্য আগাছা রয়েছে। যেগুলো পরিকল্পিতভাবে নিরসন করা গেলে সৌন্দর্য আরও উপভোগ্য হবে। আর এ জন্য দরকার যথাযথ পদক্ষেপ।  

সুঁইগ্রামের বাসিন্দা তছির হোসেন জানালেন তার অসাধারণ অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, কলমীগাড়া বিলে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে পদ্ম ফুল ফোটা শুরু হয়। শরৎকালে বেশি ফুল ফোটে। এখানে কেউ পদ্ম ফুলের চাষ করে না। বছরের পর বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে এ বিলে পদ্ম ফুল ফুটে আসছে। বিলের নিচু এলাকার কিছু জমি চাষাবাদের আওতায় আসায় পদ্ম বিলের পরিধি অতীতের চেয়ে এখন অনেক কমে গেছে। তবে এটিকে যদি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আনা যায়, তাহলে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য হতে পারে ভিন্ন মাত্রার বিনোদন ব্যবস্থা। 

পদ্ম ফুল দেখতে আসা জাবের আল শিহাব, হুমায়ুন সজীব বলেন, গ্রামবাংলায় পদ্ম ফুল বেশ পরিচিত। খোঁজ পেয়ে দেখতে এসেছি। বিলে পদ্ম ফুল দেখে মুগ্ধ হলাম। তবে বিলটিকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে আমাদের এই পাবনা তথা কলমিগাড়া বিলের নামও বেড়ে যাবে দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আবেদ আলী। ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। তিনি পাঁচ বছর ধরে পদ্ম মৌসুমে পদ্ম ফুল, পদ্ম চাক ও পদ্ম পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, সকালে বাড়ির পাশের বিল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা পদ্ম ফুল, পদ্ম চাক ও পদ্ম পাতা তোলেন। ১০টি পদ্ম ফুলের এক আঁটি ১৫ টাকায়, ছয়টি পদ্ম চাক ১০ টাকায় এবং প্রতিটি পদ্ম পাতা ৬ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এ ভাবেই বছরের অর্ধেকটা সময় তিনি ব্যস্ত সময় পার করেন।

Link copied!