• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিষ্ণুধাম মুক্তিনাথ, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মন্দির


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৭:২০ পিএম
বিষ্ণুধাম মুক্তিনাথ, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মন্দির

সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করতে কত পথ পেরিয়ে যেতে হয়। যেতে হয় কতো উঁচুতে। উদ্দেশ্য একটাই, সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টিলাভ। তেমনই একটি উপাসনালয় হচ্ছে বিষ্ণুধাম মুক্তিনাথ । যা নেপালে অবস্থিত। নেপালের রানিপৌয়া নামক স্থানে রয়েছে এই মন্দিরটি।

কথিত রয়েছে, কোনও এক রানি যাত্রীদের রাত্রিবাসের জন্যে ধর্মশালার নির্মাণ করেন। তাই এই স্থানটির নাম রানিপৌয়া। এখানেই অবস্থিত রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মন্দির বিষ্ণুধাম মুক্তিনাথ। যা সমুদ্র পিষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় থোরং লা পাসের পাদদেশে অবস্থিত। মন্দিরের উপরে দুইটি কুপ রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, এই দুইটি কুপে ডুব দিলে পাপ মোচন হয়ে যায়।

উমাপ্রসাদবাবু নামে এক লেখক ‘মুক্তিনাথ’-বইয়ে এই মন্দিরের ইতিহাস তুলে ধরেন। যেখানে উল্লেখ রয়েছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত হিন্দু মন্দিরগুলোর মধ্য অন্যতম এটি। বৌদ্ধদেরও পুণ্যভূমি এই মুক্তিনাথ। দুইটি ভিন্ন ধর্মের সহাবস্থানের এক জাজ্বল্যমান প্রতীক এই মন্দির।

মন্দিরের পেছনের দিকে রয়েছে ১০৮টি গোমুখী জলধারা, যেখান দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। মন্দিরের সামনে রয়েছে দুটি কুণ্ড বা চৌবাচ্চা। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, ১০৮টি জলধারার নিচ দিয়ে গিয়ে প্রথম কুণ্ডে তিন ডুব আর দ্বিতীয়টাতে এক ডুব দিয়ে মন্দিরে পূজা দিলে সব পাপ মোচন হয়ে যায়।

মুক্তিনাথ মন্দিরটি খুব একটা প্রাচীন নয়। ১৮১৫ সালে এটি নির্মিত হয়। তবে এর আগে এখানে কোনও মন্দির ছিল কি না তার কোনও প্রামাণ্য নথি নেই।

মুক্তিনাথ মন্দিরের কাছেই কালিগণ্ডকী নদীর গর্ভে পাওয়া যায় শালগ্রাম শিলা, যা ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক হিসেবে হিন্দুসমাজের কাছে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে মান্য। মন্দির প্রাঙ্গণে সুবিশাল এক বৌদ্ধমূর্তিও সুরক্ষিত।

ইতিহাস বলে, এক বৌদ্ধ ভিক্ষুণির তত্ত্বাবধানে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ দ্বারা অত্যন্ত সরলভাবে বিষ্ণুর পূজার্চনা করা হয় এই মন্দিরে। হিন্দু মন্দিরের মতোই এটি। কিন্তু এখানে পাণ্ডার কোনও উপস্থিতি নেই। পূজারি বিগ্রহের পাশে দাঁড়িয়েই থাকেন কেবল। যাত্রী নিজেই তার ইচ্ছা মতো পূজা করেন।

বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীরা এই মন্দিরকে বৌদ্ধ মন্দির ‘চুমিগ গ্যাত্‌সা’ বলে থাকেন। বৌদ্ধদের মতে, চুমিগ গ্যাত্‌সা ডাকিনীদের মন্দির। অর্থাৎ এই স্থান চব্বিশটি বৌদ্ধ তান্ত্রিক পিঠের একটি পিঠ। পদ্মসম্ভব এবং অনেক মহাসিদ্ধগণের আশীর্বাদধন্য এই পিঠ। 

বৌদ্ধদের বিশ্বাস, গুরু রিম্পোচে অর্থাৎ পদ্মসম্ভব এখানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। এই  মন্দিরের বিগ্রহ অবলোকিতেশ্বরের। ১৮১৮ সালে তিব্বতী মহান যোগি শবকর এই মন্দিরে কিছু সময় বাস করেছিলেন।

আরও কথিত রয়েছে, এই স্থানটি শালগ্রাম হওয়ায় নেপালের রানি সুবর্ণপ্রভা মুক্তিনাথ মন্দিরটি  স্থাপন করেন। অনেকের ধারণা, এই মন্দির স্বয়ম্ভু। এই রকম নাকি আরও সাতটি মন্দির রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে শ্রীরঙ্গম, শ্রীমুষনাম, তিরুপাতি, নৈমিসারণ্য, থোটাদ্রী, পুষ্কর ও বদরিনাথ। ১০৮ টি বৈষ্ণব ধামের মধ্যেও এই মন্দির গণ্য করা হয়।

Link copied!