‘গাড়ি চলে না চলে না..চলে না রে গাড়ি চলে না’ বিখ্যাত গায়ক শাহ আব্দুল করিমের এই গানটির কথা মনে আছে? সুরে সুরে গাড়ি না চলার কথাই জানিয়েছেন এই গানে। গানের কথা তো কল্পিত হয়। তবে এই কথাই যদি বাস্তব রূপে দেখা যায়। বলুন তো কেমন হবে?
সত্যি সত্যি, যদি কোথাও গাড়িশূন্য নগরী খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে চলে না কোনও গাড়ি। মানুষের প্রতিদিনের ব্যস্ততা কাটে পায়ে হেঁটে। না, এটা গল্পের রূপকথা নয়। সভ্যতার বিবর্তনে বিশ্ব এগিয়ে গেলেও কিছু শহর রয়েছে যেখানে নেই কোনও গাড়ি।
সভ্যতার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রায় যোগ হয়েছে গাড়ি। বেড়েছে গাড়ির চাহিদা। একটি নয়, বরং একাধিক গাড়ি হেঁকে বেড়াচ্ছেন অভিজাত পরিবারগুলো। গাড়ি হাঁকানো যেন আভিজাত্যের অন্যতম পরিচয় হয়ে উঠেছে। ভাবুন তো, গাড়ি ছাড়া যদি কোনও নগরী কি চিন্তা করা যায়। সেই নগরী কি অভিজাত্যের তালিকা উঠে আসবে? অবশ্যই উঠে এসেছে। এমনকি সেই নগরীর জীবনযাত্রা মান হয়েছে আরও উন্নত। সেসব নগরীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনও উন্নয়ন না করেও সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছে এবং তা মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশ্বের বুকে গাড়ীহীন সেসব নগরী বা শহরের কথা চলুন জেনে নেই।
অসলো
নরওয়ের রাজধানী অসলো। ঐতিহ্যবাহী পুরাতন নগরী এটি। ৭ লাখের একটু বেশি অধিবাসীর এ শহর। এই শহরের সড়ক কর্তৃপক্ষ অবাক করা এক নিয়ম চালু করেছেন। নগরীর সবাইকে রাস্তা ব্যবহারে মানতে হয় কিছু নিয়ম। ২০১৫ সালে স্থানীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ পরিবেশকে দূষণহীন রাখার জন্য শহরকে গাড়িমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৯ সালে রাস্তায় গাড়ী পার্কিং করা নিষিদ্ধ করা হয়। নগরের বাসিন্দারা পায়ে হেটেই গন্তব্যে ছুটেন। বড় জোড় একটি সাইকেল ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায় এখানে। প্রথমে একটু অসুবিধায় হয়েছে বটে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের সুফল দেখে নগরীর সবাই মেনে চলছেন এই নিয়ম। এই নগরীতে দর্শনীয় স্থানেরও কমতি নেই। প্রতিবছর এখানে আসে অসংখ্য পর্যটক। পর্যটন থেকে শহর কর্তৃপক্ষও প্রচুর রাজস্ব আয় করে। পর্যটকদেরও এই নিয়ম মেনেই ঘুরে বেড়াতে হয় এই শহরে।
লামু
পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার লামু। এই শহরেও কিন্তু চলাচলের জন্য কোনও গাড়ীর ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগের একমাত্র উপায় পায়ে হাটা। সাইকেলও রয়েছে অন্য মাধ্যম হিসেবে। এখন কথা হলো যদি হাটাহাটি অথবা সাইকেল চালানোর অভ্যাস না থাকে তাহলে। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। এখানে অধিবাসীরা আদিকাল থেকেই গাঁধার পিঠে চলতে অভ্যস্ত। প্রায় সবার কাছেই আছে এই প্রাচীন বাহন। কাজেই প্রয়োজনে চেপে বসুন ভাড়া করা গাঁধার পিঠে। আর ঘুরে বেড়ান ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত অপূর্ব সুন্দর এই প্রাচীন নগরীতে।
বিথন
নেদারল্যান্ডের একটি গ্রাম বিথন। এখানে পায়ে হাঁটা বা সাইকেল তো দূরের কথা, কোনও রাস্তাই পাওয়া যাবে না। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন গ্রামের অধিবাসীদের যোগাযোগের মাধ্যম কী? এখানকার অধিবাসীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। নৌকায় চড়েই এক জায়গা থেকে অন্যত্র ছুটের নগরীর মানুষেরা। গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে অসংখ্য খাল। যার মোট দৈর্ঘ প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার। সম্পূর্ণ গ্রামটি নৈসর্গিক সৌন্দর্য দিয়ে পরিপূর্ণ। পরিষ্কার বাতাস, পাখ-পাখালির কলতান আর ফুলের সুবাস সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নিবে। এজন্যই প্রতি বছর এই গ্রামটি দেখতে ছুটে যান সৌন্দর্য পিপাসু হাজার হাজার পর্যটক। তবে নৌকা চালালেই হবে না। এতেও রয়েছে কঠোর নিয়ম। মনে রাখতে হবে নৌকা চালোনার সময় কোনও শব্দ করা যাবে না। নিশব্দে নৌকা চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় নগরীর অধিবাসীদের।
Zermatt
সুইজারল্যান্ডের জারম্যাট। ম্যাটারহর্নের গোড়ায় অবস্থিত এই শহরটি। শহরটি সম্পূর্ণ গাড়িমুক্ত। পায়ে হেটে জারমাট থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ট্রেনে চড়ে সেখানকার মানুষ। এই শহরের সবাই ঘোড়ার গাড়ি বা পায়ে চলাচলেই অভ্যস্ত।
ভেনিস
ইতালির বিখ্যাত শহর ভেনিসও গাড়িশূন্য। পানিতে ভাসমান এই শহরেও গাড়ি চলে না। সবাই নৌকায় যাতায়াত করে। স্থানীয়রা নৌকায় চড়ে বা পায়ে হেঁটে ভেনিসে ঘুরে বেড়ান বা গন্তব্যে যান। ভেনিসে ১৭৭টি খাল রয়েছে। আরও রয়েছে ৪১৬টি সেতু। বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ এই শহরটি।
গিথোর্ন
হল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত গির্থোন শহর। এখানেও গাড়িমুক্ত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। নৌকা ছাড়া এই শহরে চলার কোনও উপায় নেই। তবে চাইলে সাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যেতে পারেন। ছবির মতো সুন্দর এই শহরেও পর্যটকদের ভিড় হয় প্রতিবছর।
আপনার মতামত লিখুন :