• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ওরসাটো: বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি থেকে ফুটবল রেফারি


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২, ০৩:০১ পিএম
ওরসাটো: বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি থেকে ফুটবল রেফারি

মরুর দেশ কাতারে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ইকুয়েডর-কাতার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসরের ফুটবলীয় লড়াই। বিশ্বকাপে সুযোগ না পেলেও উদ্বোধনী ম্যাচে থাকবে ইতালির উপস্থিতি। ইতালিয়ান রেফারি ড্যানিয়েল ওরসাটো পরিচালনা করবেন এই ম্যাচ। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ পরিচালনা করে নিজের স্বপ্ন পূরণের অংশীদারও হবেন ওরসাটো। প্রথমবারের মতো যে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ পরিচালনা করবেন।

ছোটবেলায় আলোক বাতি জ্বালানো-নেভানো দেখে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হওয়াতেই বেশি আগ্রহ ছিল তার। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে শুরু করেছিলেন নিজের কর্মজীবনও। এখানে এসেই বদলে যায় তার জীবনের গতিপথ। কর্মজীবনের প্রথম দিনে এক সহকর্মীর পরামর্শে ফুটবল রেফারিং কোর্সে ভর্তি হয়ে যান ওরসাটো। ওই যে ফুটবলের সাথে পথচলা শুরু, তার স্বপ্ন পূরণের সবটুকুই পূর্ণ হবে ২০ নভেম্বর (রোববার) কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচে।

ইতালির ভিসেনজা শহরে জন্ম নেওয়া ওরসাটো ২০১০ সালে নাম লেখান রেফারিংয়ে। ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্ণ হওয়ার বছরেই সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপ ম্যাচে মূল রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালনের। এর আগে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও ছিল ওরসাটোর নাম। সেবার অবশ্য তার দায়িত্ব ছিল ভিএআর রেফারি হিসেবে। এবার পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন বিশ্বকাপের মূল রেফারি।

মূল রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে তার নামের পাশে অবশ্য যুক্ত হয়েছে সেরা রেফারির তকমাও। বছর দুয়েক আগে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশন্যাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টোরি ও স্ট্যাটিসটিক্সের মতে ওরসাটো ছিলেন বর্ষসেরা রেফারি।

রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা ছোটবেলার জীবনে তার লক্ষ্য ছিল না পরিষ্কার করেই জানিয়েছেন। ওরসাটো বলেন, “ছোটবেলা আলোক বাতির জ্বলা-নেভা দেখে আমি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম। এর জন্য ট্রিসিনো ভকেশনাল ট্রেইনিং স্টেন্টারে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করেছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে চাকরি পাওয়ার পর প্রথম ভাবনাই ছিল আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছি।”

জীবনের প্রথম স্বপ্ন পূরণের পর এক সহকর্মীর পরামর্শে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির চাকরি ছেড়ে ফুটবলে রেফারিংয়ে নাম লেখান ওরসাটো। এখানে দারুণ সফল এই ইতালিয়ান। পরিচালনা করেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের মতো হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ। ওই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব কতটা কঠিন ছিল, তাও জানিয়েছেন ড্যানিয়েল ওরসাটো।

তিনি বলেন, “আমি অনুশীলন করছিলাম। ওই সময় উয়েফা থেকে রোসেট্টি থেকে ভিডিও কল পাই। ও জিজ্ঞাসা করছিল, আমি আরেকটি ম্যাচ পরিচালনা করতে পারবো কি-না। ওই মুহূর্তে শুধুমাত্র বায়ার্ন মিউনিখ ও পিএসজির ফাইনালটাই বাকি ছিল। আমি সাথে সাথেই হ্যাঁ বলে দেই।”

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে এই ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে কতটা আবেগিত তাড়িত হয়ে পড়েছিলেন সেই বিষয়টিও খোলাসা করেছেন ওরসাটো। তিনি বলেন, “আমি বাড়ি ফিরেই বিছানায় শুয়ে কান্না শুরু করি। আমি কান্না করছি, এটা দেখেই আমার বাচ্চারা বুঝতে পেরে যায়, আমি এই দায়িত্ব পেয়েছি। ওরা আমাকে জড়িয়ে ধরে।”

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের এই ম্যাচ পরিচালনার পরই বিশ্বকাপ ম্যাচ পরিচালনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন ওরসাটো। সাধারণত ৪৫ বছর বয়সকেই ধরা হয় একজন রেফারির শেষ সময়। সেই সময় দুই বছর আগেই পিছনে ফেলে এসে ৪৭-এর দ্বারপ্রান্তে থাকা ড্যানিয়েল ওরসাটো পরিচালনা করবেন বিশ্বকাপের ২২তম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচ। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ পরিচালনার তিনদিন পর বয়সের কোটায় ৪৭ পূর্ণ করবেন এই ইতালিয়ান।

বয়স বাড়তে থাকলেও নিজেকে এখনও ম্যাচ পরিচালনার জন্য পরিপূর্ণ ফিট আছেন বলে জানান ওরসাটো। বলেন, ‘আমি এখন ৪৬ বছর বয়সী। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক রেফারি হলেও আমার ফিটনেসে কোনো ঘাটতি নেই। টেকনিক্যাল কিংবা ফিটনেস সব বিবেচনাতেই আমি ঠিক আছি।”

ফুটবল দুনিয়ায় রেফারি হিসেবে আলাদা একটি পরিচয় আছে ওরসাটোর। ফুটবলারদের কার্ড দেখাতে বেশ পটু। সঠিক সিদ্দান্ত নিতে ভিএআরের প্রতি নির্ভরতাও বেশি। ফুটবল মাঠে শতভাগ সঠিক থাকতেই এই পথ বেছে নেওয়া বলেও জানান ওরসাটো।

বলেন, “মাঠে আমি সবসময় শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি এতেই শান্তি পাই। ৯০ মিনিটের ওই দায়িত্ব আমাকে কঠিন হতে শিখিয়েছে এবং মাঝে মাঝে অতিরিক্ত কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।”

Link copied!