নেইমার করলেন এক গোল, লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে করলেন জোড়া গোল। আক্রমণভাগের দারুণ বোঝাপড়ায় প্রতিপক্ষ ইসরায়েলের ক্লাব ম্যাকাবি হাইফা ভাসলো গোল বন্যায় । একেবারে যাকে বলে আদর্শ ফুটবল ম্যাচ, সেটাই যেন খেললো ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই(পিএসজি)। হাইফার বিপক্ষে তাদের জয়টা এসেছে ৭-২ গোলের বড় ব্যবধানে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে ঘরের মাঠে ম্যাকাবি হাইফার বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল ফরাসি ক্লাব পিএসজি। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ শুরু করে মেসিরা।
ম্যাচের নবম মিনিটে দারুন ওয়ান টু ওয়ান খেলে সতীর্থ রুইজকে পাস দিয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি
১৯তম মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় পিএসজি। বা পাশ থেকে উড়ে আসা সতীর্থের বল পেয়ে হেড দিয়ে বক্সের ভিতর কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দেন মেসি।
তবে এমবাপ্পে শট নিতে পারায় আবার মেসিকে ফেরত দেন৷ ফিরতি বল পেয়ে বাম পায়ের কোনাকুনি থ্রুতে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি।
ম্যাচের ২৫তম মিনিটে এমবাপ্পেকে ফাউল করা নিয়ে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে হলুদ কার্ড দেখেন পিএসজির ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার।
পিএসজির আক্রমণ সামলে বেশ কয়েকবার পাল্টা আক্রমণে গিয়েছিল হাইফা। তবে পিএসজির শক্ত রক্ষণে চিড় ধরাতে পারেনি।
৩২তম মিনিটে হাইফার আক্রমণের পাল্টা আক্রমণেই ম্যাচের দ্বিতীয় গোল পায় পিএসজি।
দ্বিতীয় গোলটা যেন প্রথম গোলের হুবহু অনুকরণ! এবার ডান পাশে এমবাপ্পে বল দেন মেসি ও নেইমারের উদ্দেশ্য! তবে কেউ বল না পেলে হাইফা ডিফেন্ডারের পায়ে বল লেগে চলে যায় আবার এমবাপের কাছে।
মেসির মতো কোনাকুনি থ্রুতে লক্ষ্যভেদ করে গোল ব্যবধান দ্বিগুন করেন এমবাপ্পে।
মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে আবারও গোলের দেখা পায় পিএসজি। মাঝমাঠের নীচ থেকে পাওয়া পাস টেনে এনে মেসিকে দেন এমবাপ্পে। এরপর মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে সেই ডান পাশ থেকেই লক্ষ্যভেদ করেন নেইমার, পিএসজি এগিয়ে যায় ৩-০ গোল ব্যবধানে।
তবে তিন গোল হজম করে ভড়কে যায়নি হাইফা। আক্রমণের ধার বজার রাখে। ম্যাচের ৩৮তম মিনিটে গোলের দেখাও পেয়ে যায় তারা। বাম পাশ থেকে মারা সতীর্থের ফ্রি কিকে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আবদৌলাই সেক।
গোলের দেখা পেয়েই যেন ছন্দ খুজে পায় হাইফা। একের পর আক্রমণে পিএসজির রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে মেসি ম্যাজিকের দেখা মেলে! এমবাপ্পের পাস পেয়ে হাইফা দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বা পায়ের দুর্দান্ত গড়ানো শটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন আর্জেন্টাইন ফুটবল যাদুকর, পিএসজি এগিয়ে যায় ৪-১ গোলের ব্যবধানে।
বিরতি থেকে ফেরার পর তিন মিনিটের মধ্যে জোড়া সুযোগ তৈরি করেছিল হাইফা। কিন্তু তার একটাও কাজে লাগাতে পারেনি।
৫০তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় হাইফা। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে জটলার মধ্যে হেডে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সেক।
দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আক্রমণ করেছে পিএসজি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে পিএসজি।
ম্যাচের ৬১তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে চিতা বাঘের মতো ক্ষিপ্রতায় বল নিয়ে ছুটে গিয়ে মেসিকে পাস দেন নেইমার। বল পেয়ে গোটা কয়েক হাইফা ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এমবাপ্পেকে দেন মেসি। তবে এমবাপ্পে সেই বল কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে আর ভুল করেননি এমবাপ্পে। ডান পাশ থেকে উড়ে আসা সতীর্থসের ক্রস থামিয়ে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন তিনি, পিএসজি এগিয়ে যায় ৫-২ গোলের ব্যবধানে।
তিন মিনিটের ব্যবধানে হাইফার জালে আবারও বল! তবে এবার আর পিএসজির কেউ গোল করেনি! নেইমারের ডান পাশে কাছের পোস্ট থেকে মেসির উদ্দেশ্যে মারা শট হাইফা ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে জালে ঢুকলে আরও একটি গোল যোগ হয় পিএসজির স্কোরবোর্ডে, তারা এগিয়ে যায় ৬-২ গোলের ব্যবধানে।
ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি! তবে তার দুর্দান্ত কোনাকুনি শট গোলপোস্টে লেগে ফেরত আসলে হতাশ হতে হয় তাকে।
৮২তম মিনিটে আরও একবার সুযোগ হাতছাড়া হয় পিএসজির! মেসির অ্যাসিস্টে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রুইজ।
তবে পরের মিনিটেই ম্যাচের সপ্তম গোল পায় পিএসজি! বক্সের উপর থেকে মেসির অ্যাসিস্টে দুর্দান্ত শটে লক্ষ্যভেদ করেন কার্লোস সোলার। শেষদিকে নেইমারকে ফাউল করলে বক্সের সামনে ফ্রি কিক পায় পিএসজি। তবে মেসির ফ্রি কিক উপর দিয়ে উড়ে গেলে আর হ্যাটট্রিক পাওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত আর গোল না হলে ৭-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পিএসজি।
আপনার মতামত লিখুন :