• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
কাতার বিশ্বকাপ

গোলরক্ষক: অ্যা থ্যাংকলেস জব!


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২, ১০:২১ পিএম
গোলরক্ষক: অ্যা থ্যাংকলেস জব!
ছবিঃ গেটি ইমেজস

ফুটবলে গোলরক্ষকদের কাজকে সাধারণত ‘থ্যাংকলেস জব’ বলা হয়ে থাকে। কারণ। গোলরক্ষকরা যত ভালোই খেলুক না কেন, আড়ালেই থেকে যান। তবে যদি অসাবধনাবশত ভুল করেন তখন সবাই তার মুণ্ডুপাত করা শুরু করেন। তবে ফুটবল মাঠের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জায়গা তিন কাঠির পোস্টটা কিন্তু গোলরক্ষকরাই পাহারা দেন।

হটাত গোলরক্ষককে নিয়ে কেন পড়লাম? কারণটা বোধহয় একটু অনুমেয় হওয়ার কথা! ঘণ্টা কয়েক আগে এক গোলরক্ষকের কাছেই তো গোটা ম্যাচ খুইয়েছে চলতি ফুটবল বিশ্বকাপের সবচেয়ে হট ফেভারিট দলগুলোর একটি আর্জেন্টিনা।

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব হওয়াতে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ৩৭ হবে এটা স্বাভাবিকভাবেই ধরা হচ্ছিল।

প্রথমার্ধে খুব বেশি ভালো না খেললেও এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে গিয়েছিল মেসিরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ৪৮ থেকে ৫৩, এই পাঁচ মিনিটেই দুই গোল খেয়ে আচমকাই পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা।

গোল হজম করেই যেন মরিয়া হয়ে ওঠে! একের পর এক আক্রমণে সৌদির রক্ষণকে পাগল করে দেওয়ার অবস্থ! সৌদির রক্ষণভাগ আজ আশাতীত ভালো খেলেছে। তবে তাদের ভেদ করেও বেশ কয়েকবার আর্জেন্টিনার আক্রমণ পৌছে গিয়েছিল সৌদির গোলপোস্টে!।

কিন্তু ডিফেন্স ভেদ করতে পারলেও  ভেদ করতে পারেননি সৌদির গোলপোস্টে দাঁড়ানো মোহাম্মদ আল-ওয়াইসের তৈরি করা চীনের প্রাচীরকে। শুরুটা অবশ্য ম্যাচের শুরুতেই হয়েছিল। দ্বিতীয় মিনিটে ছোট ডি-বক্সের সামনে থেকে মেসির নেওয়া শট ফিরিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আজ তাকে ভেদ করা সহজ হবে না।

ম্যাচে মাত্র একটি গোল হজম করেছেন, সেটাও পেনাল্টিতে। তবে তাতেও পেনাল্টি নিতে আসা মেসির সঙ্গে খেলতে চেয়েছেন মাইন্ড গেম, চোখে চোখ রেখে ইশারা করেছেন কোন দিকে মারতে হবে!। যদিও ওইবার মেসির সঙ্গে পেরে ওঠেননি, তবে ওই একবারই! এরপর আর একবারও তাকে ভেদ করতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনা প্রায় গোল পেয়ে যাচ্ছিল। তবে সে যাত্রায়ও সৌদি আরবের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। আর্জেন্টাইন ফুটবলকার আলভারেজের দুর্দান্ত একটি শট লম্বা ডাইভ দিয়ে শুধু একটি গোলই বাঁচাননি, লিওনেল মেসি নামক এক ফুটবল মহিরুর দলকেও হারের তেতো স্বাদ দিয়েছেন, তাও টানা ৩৬ ম্যাচ পর।

পুরো ম্যাচ জুড়েই যেন আজ অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন। কখনো লাফিয়ে উঠে গ্রিপ করেছেন, কখনো ফিক্সড করে গোলপোস্ট বিপদ্মুক্ত করেছেন! যেন যুদ্ধে নেমেছিলেন, যে যুদ্ধে তার দল প্রথম এশিয়ান দল হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেয়েছে।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রায় বাঁধা হওয়া ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলরক্ষক লম্বা সময় খেলেছেন সৌদি আরবের আল-শাবাব ও আল-আহলিতে। কয়েকদিন আগেই যোগ দিয়েছেন আল-হেলালে। সৌদির হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৪৩ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি, তবে এই ৪৩তম ম্যাচটি আর যাই হোক কখনোই ভুলবেন না, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

অথচ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই সৌদির ডিফেন্স অ স্ট্রাইকারদের প্রশংসা আর আর্জেন্টিনার সমালোচনা করতেই ব্যস্ত! তিন কাঠির নীচে দাঁড়িয়ে নিজেকে আজ সত্যিকারের সুপার ম্যানে পরিণত করা ওয়াইসের প্রশংসাও করা উচিত। তবে হ্যাঁ, এজন্যি হয়তো গোলরক্ষকের কাজকে ফুটবলে থ্যাংকলেস জবা বলা হয়!

Link copied!