• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

‘বেস্ট’ হয়েও বিশ্বকাপে নাম নেই


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২, ১২:৫৫ পিএম
‘বেস্ট’ হয়েও বিশ্বকাপে নাম নেই

জর্জ বেস্ট; নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লাল জার্সিতে কারিকুরি দেখানো একজনের চেহারা। ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময়ে অ্যালকোহল ও নারীর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি তাকে ছিটকে দিয়েছিল ফুটবল থেকে। তবুও ইউনাইটেডের জার্সিতে যা করেছেন তা মোটেও কম নয়। ক্লাবের হয়ে ইউরোপজয়ী হলেও বিশ্বকাপে পড়েনি তার পদচিহ্ন।  দূর্ভাগ্য নাকি পাপের প্রায়শ্চিত্ত তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এটা চিরস্থায়ী আক্ষেপ, তা বলতে বাধা নেই।

১৯৬১ সালে ইউনাইটেডের যুব দলে আসেন জর্জ বেস্ট। অসম্ভব প্রতিভাবান বেস্টকে দুই বছরের মাথায় মূল দলে অভিষেক করাতে বাধ্য হন তখনকার ইউনাইটেড কোচ ম্যাট বুসবি। মূলত তার ফুটবলীয় দক্ষতাই বুসবিকে বাধ্য করেছিল বেস্টকে মূল দলে আনতে। এর আগে অবশ্য বেলফাস্টের রাস্তায় তার খেলাতে মুগ্ধ হয়েই ওল্ড ট্রাফোর্ডে এনেছিলেন।

আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টের রাস্তায় ফুটবলের পরিবর্তে টেনিস বল দিয়ে নিজের পায়ের জাদু দেখাতেন জর্জ বেস্ট। নিজ শহরে নজর কাড়েন সেই সময়কার ইউনাইটেড কোচ বুসবির এক স্কাউটের। তৎক্ষণাৎ তিনি বুসবিকে ফোন করে বলেছিলেন, “অসাধারণ এক প্রতিভা পেয়েছি।”

সেখান থেকেই নজরে আসেন বেস্ট। দুই বছর যুব দলে খেলেই সরাসরি ইউনাইটেডের মূল একাদশে। রেড ডেভিল জার্সিতে নিজের দ্বিতীয় মৌসুমেই নিজেকে করেছিলেন প্রমাণ। তার জাদুকরী ফুটবলে আট বছর পর ইংলিশ লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ১৯৬৮ সালে ঘরে তোলে ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা।

তবে সময় যতই বাড়ছিল, ততই ফুটবল থেকে দূরে ছিটকে যাচ্ছিলেন জর্জ বেস্ট। বয়স বাড়ার সাথে নারীদের প্রতি বাড়ছিল তার আসক্তি। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছিল অ্যালকোহলের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি। নারীদের দ্রুতই বশে আনতে পারার গুণের সাথে অ্যালকোহল, দুই মিলে ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময়েই খেই হারিয়ে ফেলেন।

মাত্র ২৬ বছর বয়সে মূলধারার ফুটবল থেকে দূরে সরে যান জর্জ বেস্ট। মূল ধারার ফুটবল থেকে তার ছিটকে যাওয়ার প্রায় আট বছর পর ১৯৮২ সালে বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়ে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। সেইবার বেস্টকে নিয়েই বিশ্বকাপে যেতে চেয়েছিলেন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড কোচ বিলি বিংহ্যাম। এর জন্য বেস্টকে একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন।

বিশ্বকাপের আগে বেস্টকে বলেছিলেন, মূল ধারার ফুটবলে ফিরতে। এমনকি ইংলিশ ক্লাব মিডলসবরোতে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। যোগ দিবেন এমন আশা দিয়েও শেষ পর্যন্ত আর ক্লাবটিতে নাম লেখাননি জর্জ বেস্ট। ফলে, কথা দিলেও বেস্টকে ছাড়াই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে বিংহ্যাম বিশ্বকাপে যান।

অ্যালকোহল আর নারী আসক্তি, দু’টোর কোনোটিই বেস্টের বিশ্বকাপ খেলতে না পারার সঠিক কারণ নয়। ১৯৮২ এর আগে দুইবার দলকে বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়ে দলকে বিশ্বকাপে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বেস্ট। ফুটবল দলীয় খেলা, মাঠে সতীর্থদের সঠিক সমর্থনের সাথে কার্যকারিতার অভাবে দুইবারের কোনোবারই দলকে বিশ্বকাপে টেনে তুলতে পারেননি।

১৯৬৬ সালে তুলনামূলক সহজ গ্রুপে লড়াই করেছিল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। সুইজারল্যান্ড, আলবেনিয়া ও হল্যান্ডের (শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি তখনও) গ্রুপে পড়েও বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি বেস্টের আয়ারল্যান্ড। পরের বাছাইপর্বেও দূর্দান্ত শুরুর পরও শেষ রাউন্ডে হেরে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় বেস্টকে। শেষ পর্যন্ত সারাজীবনই আক্ষেপটা ছিল বিশ্বকাপ রাঙাতে না পারার। হয়তো নারী ও অ্যালকোহলে না জড়ালে অন্তত একবার বিশ্বকাপ মঞ্চে নামতে পারতেন!

Link copied!