ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ওই দেশে জন্ম না নিলে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ পর্তুগালের নামই জানতো না। ফুটবলের বরপুত্র হিসেবে খ্যাত সিআর সেভেনের জীবনে একমাত্র বিশ্বকাপ ছাড়া আর কোনো ট্রফি অধরা নেই। বিশ্বসেরা ফুটবলার হিসেবে ব্যালনডি’অর জিতেছেন ৫ বার। EUFA, European Championship-সহ মোট ৩২টা ট্রফি তিনি অর্জন করেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার ১৪০ গোলের রেকর্ড, ক্লাব এবং দেশ মিলিয়ে তার মোট গোল ৮০০ ছাড়িয়েছে, যা যে কোনো ফুটবলারের জন্য স্বপ্ন। ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ এবং নিজ দেশ পর্তুগালের হয়ে তিনি ফুটবলপ্রেমীদের আনন্দে ভাসিয়েছেন দুই দশক ধরে।
রোনালদোর জন্ম ১৯৮৫ সালে। এখন বয়স ৩৭। তার পা এখন আর আগের মতো ক্ষুরধার নেই সত্যি, কিন্তু তিনি যে ফুরিয়ে গেছেন, সে কথাও বলা যাবে না। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে গোল করে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। তিনিই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি ৫টি বিশ্বকাপ খেলে সবগুলোতেই গোল করেছেন। আর যেখানে ইতালীর মতো চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল এবার কোয়ালিফাই করতেই পারেনি, সেখানে পর্তুগালের টানা ৫টি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাতেও রোনালদোর বিরাট অবদান।

এই রকম একজন অল টাইম গ্রেট প্লেয়ারকে চোখের জলে বিদায় নিতে হলো সাইড লাইনে বসে থেকে; তাও কোনো ইনজুরি ছাড়া, শুধু কোচের রোষানলে পড়ে! বিশ্বকাপ তিনি ধরতে পারবেন কি পারবেন না সেটা যাচাই করার সুযোগও দিলেন না কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। জানি না রোনালদোর কি অপরাধ, তবে তাকে এভাবে অপমান করাটা কোনোভাবে মানতে পারছি না। পর্তুগালের খেলা হচ্ছে আর ক্রিস্টিয়ানো সাইড বেঞ্চে বসে কাঁদে কাঁদো চোখে তাকিয়ে আছেন মাঠের দিকে, গ্যালারিতে তার স্ত্রী-সন্তানদের মুখেও কেমন অপমান আর হতাশার ছাপ! টিভিতে সেই দৃশ্য দেখে বিশ্বজুড়ে তার ভক্তদের বুক ভেঙে যায়।
পর্তুগালের বহু কোচ আসবে যাবে, কিন্তু দ্বিতীয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো একশো বছরেও আসবে না। এই মানুষটার অপমানকে নিজের অপমান বলে মনে হচ্ছে। আমাদের ক্ষমা করবেন ক্রিস্টিয়ানো, আপনাকে বিশ্বজুড়ে মানুষ ভালোবাসে। সেই ভালোবাসায় আপনি অমর হয়ে থাকবেন।
এই ছবিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ; ইতিহাসের পাতায় কোচ সান্তোস এমন ডিফোকাস হয়েই থাকবেন, আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকবেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।
হে বন্ধু, বিদায়!








































