মালয়েশিয়ার গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পেয়ে তিনি বর্তমানে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
তার স্ত্রী রীতা রহমান মুক্তির বিষয়টি ফোনে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে খায়রুজ্জামানের আইনজীবী এনজিও চাউ ইং বলেন, “তার মুক্তির ক্ষেত্রে কোনো শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়নি। এখন তিনি একজন মুক্ত মানুষ।”
দেশটির স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে ৭০ বছর বয়সী সাবেক হাইকমিশনার খায়রুজ্জামান বলেন, “মুক্তির কথা শুনে অভিভূত হয়েছিলেন তিনি। এজন্য আদালত, তার আইনজীবী এবং মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
খায়রুজ্জামান আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের মিথ্যা অভিযোগে আটক হওয়ার পর আমি অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম। এ নিয়ে আমার পরিবারের সদস্যরাও উদ্বেগের মধ্যে ছিল। তারা আমার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত চিন্তিত ছিল।
এ সময় তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে পাবলিক ডোমেনে অনেক অফিসিয়াল রেকর্ড এবং নথি রয়েছে। যা প্রমাণ করে, তিনি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন সাবেক এই হাইকমিশনার।
মুক্তির পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে, আমি যা করতে চাই তা হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা। মুক্তির পরপরই আমি তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। সে খুব আনন্দিত।”
এদিকে সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে দেশে ফেরত পাঠানোর ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করেন দেশটির একটি আদালত।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট দেশটির অভিবাসন বিভাগের বিরুদ্ধে এই অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করেন। এর ফলে সাবেক হাইকমিশনার মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে এখনই বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না মালয়েশীয় অভিবাসন বিভাগ।
এ সময় বিচারপতি বলেন, “আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে খায়রুজ্জামানকে হস্তান্তর করা হয়েছে, এমনটি হাইকোর্ট শুনতে চান না। আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট ২০ মে তারিখ ধার্য করেছেন।”
অন্যদিকে খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমানের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অভিবাসন পুলিশ।
এ নিয়ে তার আইনজীবীদের দাবি, তাদের মক্কেল (খায়রুজ্জামান) একজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী। কোনো অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেননি। তার বৈধ ভ্রমণ নথিপত্র আছে। তিনি মালয়েশিয়ায় কোনো কাজ করছিলেন না, বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। তাই তাকে আটক করা বেআইনি। তাকে বহিষ্কার করার অধিকার মালয়েশিয়ার নেই।
এর আগে খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শুক্রবার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন কুয়ালালামপুরের একটি আদালত। এখন দেশটির হাইকোর্ট তাকে হস্তান্তরের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেন।
জানা যায়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে পরে সামরিক সরকারের আমলে প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে কূটনীতিক হন খায়রুজ্জামান। তাকে গ্রেপ্তারের কারণ নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদ্দিন গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ততার অভিযোগ রয়েছে খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের অনুরোধে বিধি মেনেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ মিশনকে জানিয়েছে, দেশটির অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সেখানে খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কাজ করছে।”
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে অবসরে পাঠানোর পাশাপাশি জেলহত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামান জামিনে বের হয়ে আসেন। এরপর চাকরি ফিরে পেয়ে ফের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ২০০৪ সালে তিনি জেলহত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি লাভ করেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়।
তবে দেশে ফিরে আসাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে খায়রুজ্জামান কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।