• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেখ হাসিনা : দূরদর্শী নেত্রীর সাহসী পথযাত্রা


অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৪:০১ পিএম
শেখ হাসিনা : দূরদর্শী নেত্রীর সাহসী পথযাত্রা

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন চলছে। কীর্তিমানদের সেই আসরে দ্যুতি ছড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর অনন্য উচ্চারণে ভাষণের একপর্যায়ে বললেন, “বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমি বিশ্বাস করি যে বর্তমান বৈশ্বিক সংকটসমূহ আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তবু উন্নয়ন সহযোগী এবং উন্নত দেশসমূহকে আমাদের এ যাত্রায় তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি; যা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় আমাদের জন্য সহায়ক হবে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যাপ্তিকাল মোতাবেক প্রদান করার জন্য আমি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

“এ বছরের মার্চ মাসে কাতারের দোহাতে অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য অপেক্ষমাণ দেশগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যাক্ত করা হয়েছে। আমি জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের দোহা কর্মসূচির সম্পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, প্রথম দফায় ২০১৮ সালের মার্চে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্য হিসেবে সিডিপির সুপারিশ লাভ করে। নিয়ম হচ্ছে এলডিসি থেকে বের হতে সিডিপির পরপর দুটি পর্যালোচনায় উত্তরণের স্বীকৃতি পেতে হয়। এ স্বীকৃতি পাওয়ার পর আরও তিন বছর এলডিসি হিসেবে থাকে একটি দেশ। তারপর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।

অর্থাৎ হিসাব করেই দূরদর্শী নেত্রী সেদিন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। উপরন্তু সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কিছু অপশক্তির অপতৎপরতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার বিষয় নিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব সোচ্চার হয়েছে। গত সাড়ে ১৪ বছরে শাসনকার্য পরিচালনায় সাংবিধানিক স্বচ্ছতার কথা সবসময় বিদেশিদের কাছে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের ক্ষমতাবান রাষ্ট্রপ্রধানরা বিশেষ গোষ্ঠী বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় হওয়ায় তিনি জাতিসংঘে উপস্থাপিত তাঁর দিকনির্দেশনামূলক ভাষণে বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন, “এই বছর (২০২৩) আমরা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী পালন করছি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্ব মানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যাক্ত করে সকলের জন্য সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান সবার মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সকলকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে, জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় আমরা সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমরা সারা বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে অন্যান্য সদস্যগণের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আজ এই অধিবেশনে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে।”

লেখা বাহুল্য, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত’ করে চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর গতিশীল ও সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটি এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়ন চমক ও উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে। কারণ, সব ক্ষেত্রে এ দেশের অসাধারণ সাফল্য বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

২.
২৮ সেপ্টেম্বর সংগ্রামী ও দরদি জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পথযাত্রায় তিনি বিশ্বনেত্রী এবং অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৬ জানুয়ারি, ২০০৯ সালে সরকার প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বছর শেষে ১৫ বছর পূর্ণ করতে চলেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন দার্শনিক এবং একজন দূরদর্শী নেত্রী। তিনি ২০০৮ সালে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ভিশন ২০২১’ রাখার মধ্য দিয়ে একজন সত্যিকারের নেতা হিসেবে তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। জয়ী হওয়ার পর ২০০৯ সালে লিখেছিলেন, “রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম আমার। পিতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। একদিন যে আমাকেও তাঁর মতো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে ভাবিনি। সময়ের দাবি আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এই আদর্শ নিয়ে বিগত ২৮ বছর যাবত জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি।” (ভূমিকা, শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১)

‘জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করার এই মানসিকতা শেখ হাসিনাকে অনন্য করে তুলেছে। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরবর্তী তাঁর পথযাত্রা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। কবি লিখেছেন, “শেখ হাসিনা, আপনার বেদনা আমি জানি।/আপনার প্রত্যাবর্তন আজও শেষ হয়নি।/বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে/আপনি পা রেখেছেন মাত্র।/আপনার পথে পথে পাথর ছড়ানো।/পাড়ি দিতে হবে দুর্গম গিরি, কান্তার মরুপথ।’ কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘পথে পথে পাথর’ কবিতায় অভিব্যক্ত এই কথাগুলোর সত্যতা রয়েছে শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যাচেষ্টার ঘটনায়। সবচেয়ে ভয়ংকর প্রচেষ্টা ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। যা বাংলাদেশের মাটিতে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার একটি। এটি ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর ও নৃশংস হামলা, কারণ রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূল করার জন্যই বিএনপি-জামায়াত গং গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।

৩.
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে একজন ব্যক্তির সাহস, সংকল্প এবং আত্ম উৎসর্গের প্রয়োজন হয়। একজন মহান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার এসব গুণ রয়েছে। তিনি দেশ ও জনগণের উন্নতির জন্য তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন। তিনি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণা ঘোষণা করেছিলেন তা এখন বাস্তবতার পথ অতিক্রম করে স্মার্ট বাংলাদেশের আঙিনায় উপস্থিত হয়েছে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল উদ্বোধন, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বড় সাফল্য। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ যখন বাংলাদেশকে এলডিসি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করেছিল তখন দারিদ্র্যের হার ছিল ৮৩ শতাংশ। বর্তমানে তা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আওয়ামী লীগ সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য দেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ৪১তম অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২২ সালে তৈরি এক তালিকায় বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ রয়েছে। গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় এ দেশ বিদ্যুৎ খাতে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের জনসংখ্যার শতভাগকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৪৭ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বড় সাফল্য, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রতিফলন। আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ করেছে। এটা এই সরকারের গণমুখী অবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

শেখ হাসিনা বলেছেন, “ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আমার সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দেওয়া হয়েছে।”

অনেক আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারত উভয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরে মাথাপিছু আয় ২৭ গুণ বেড়েছে (৯৪ ডলার থেকে ২৫৫৪ ডলার)। বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৬ বছর, যেখানে ভারতে ৬৯ দশমিক ৬৬ বছর এবং পাকিস্তানে ৬৭ দশমিক ২৭ বছর। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সকল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি হুমকিকে সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতি সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের আমলে দেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শেখ হাসিনা ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে গতিশীল এবং বহুমুখী রাজনৈতিক নেতা এবং নীতি নির্ধারক, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মতো কিছু স্বল্পমেয়াদী কৌশলের পাশাপাশি আরও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলির একটি সিরিজ নির্ধারণ করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের জন্য তার একটি মূল পরিকল্পনা হলো ভিশন ২০৪১। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ধারাবাহিকতা, যা জাতিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন গৌরবে মহিমান্বিত।

উন্নয়নের জন্য নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতির পিতার স্বপ্নকে অন্তর্ভুক্ত করে শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আসলে তিনিও বঙ্গবন্ধুর মতো দূরদর্শী নেত্রী। তিনি জাতির পিতার বাংলাদেশকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ডে রূপান্তরিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথে হাঁটছে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। মুক্তিযুদ্ধের পর যে অর্থনীতিকে একসময় ‘বেঁচে থাকার কোনো আশা ছাড়া তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, তা এখন বিশ্বব্যাপী একটি ‘উন্নয়ন অলৌকিক’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের উদ্ধৃতি দিয়ে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২০১৭ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ২০৫০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে বিশ্বে ২৩তম। তখন জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। বিনিময় হারের ভিত্তিতেও বড় হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

৪.
শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী হিসেবে পরিচিত। তিনি তাঁর দূরদর্শিতা, বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলী কূটনীতির জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী আইকনে পরিণত হওয়া এই নেত্রী এখন বিদেশে রয়েছেন। প্রতিবছরই তাঁর জন্মদিন জাতিসংঘ ও বিদেশের মাটিতে নানা ব্যস্ততায় অতিবাহিত হয়। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বাস্তবায়নে একটি উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সামনের দিনগুলোতে কাজ করতে হবে।

আমাদের তরুণ সমাজ যত বেশি ‘স্মার্ট নাগরিক’ হবে এবং ডিজিটাল ডিভাইসগুলি ব্যবহার করতে শিখবে, তত দ্রুত তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। ডিজিটাল বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের অগ্রগতি তারাই সাধন করতে পারবে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার সময় থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা শত বাধা ও প্রাণনাশের হুমকি সত্ত্বেও সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জনগণের ভোট ও সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। শেখ হাসিনার অপরিসীম ত্যাগের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। ৭৭তম জন্মদিনে কেবল বলব তিনি দীর্ঘজীবী হবেন এবং দেশ পরিচালনায় আরও অনেকদিন সক্রিয় থাকবেন। নেত্রীকে নিয়ে লেখা ‘তিনি আমাদেরই লোক’ কবিতায় কবি রফিক আজাদ লিখেছেন, ‘এই গরীব দেশের প্রতিটি বৃক্ষ ও মাটি তার জন্য কান্না ধরে রাখে নিজস্ব নিয়মে; আমি কি পাথর নাকি-তার জন্য এই দুই চোখে কোনো জল ধরে কি রাখবো না?’ নেত্রীর জন্য অশ্রুময় আঁখি নিয়ে দেশপ্রেমের দীক্ষায় প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকব আমরা; কাজ করব আগামী দিনগুলোতে।  

লেখক : কোষাধ্যক্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Link copied!