নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, “কারো যদি ইচ্ছা হয় আমাকে গডফাদার বলতে, বলবেন। দুইদিন আগে কারো ইচ্ছা হয়েছে, আমাকে ফাদার বলতে, তিনি বলেছেন। তিনদিন আগে ইচ্ছা হয়েছে, ব্রাদার বলতে, বলেছেন। এখন কারো যদি মনে হয়, আজকে তোমাকে ব্রাদার বলবো, কালকে ফাদার বলবো, পরশু তোমাকে গডফাদার বলবো। ভাই যাই বলেন, শুধু গডমাদার বইলেন না। কে কি বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”
সোমবার (১০ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, “আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত ও অবাক হই, আমি কেন সাবজেক্ট ম্যাটার (আলোচনার বিষয়) হবো? সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার প্রশ্ন আমি কেন সাবজেক্ট হই সবসময়? আমার অবস্থা গরীবের ভাবির মতো। এ বলে আমি ওনার, উনিও বলে আমি ওনার। কি একটা পজিশনে আমি পড়েছি আমি জানি না।”
এই সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, নারায়ণগঞ্জ শেখ হাসিনার ঘাঁটি, নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি, নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঘাঁটি। এখানে অন্য খেলা খেলার চেষ্টা করবেন না।”
সাংসদ শামীম ওসমান আরো বলেন, “কোনো দেওয়া-নেওয়ার জন্য আমি রাজনীতি করতে আসিনি, কোনো পদ-পদবি পাওয়ার জন্য আমি রাজনীতি করতে আসিনি। রাজনীতি করতে এসেছি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতে, যা হয়ে গেছে। রাজনীতি করতে এসেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে, যা চলমান আছে। এখন রাজনীতি করছি, পরবর্তী প্রজন্মকে জাতির পিতার নেতৃত্বে একটি সুন্দর দেশ দেওয়ার জন্য। যাতে বলতে পারি, আমরা এখন কারো পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। আমরা নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।”
নাসিক নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় নামার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি এই কয়দিন চুপ ছিলাম একটা কারণে, যে এটা আমার কাজ না। এখন যেভাবে আমার চুপ থাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে এবং আমার দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই কারণে আমি ভাবলাম আমার কথা বলা উচিত। আজকে থেকে সরাসরি নৌকার পক্ষে প্রচারণায় নামলাম।”
এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, “কে প্রার্থী সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের দেখার বিষয় একটাই এটা আমার স্বাধীনতার নৌকা, এটা আমার জাতির পিতার নৌকা, এটা আমার শেখ হাসিনার নৌকা, এটা আমার বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নৌকা, এটা আমার রক্ত দিয়ে গড়া নৌকা, এটা আমাদের ৪৯ জন লাশের নৌকা, এটা চন্দন শীলের দুই পায়ের বিনিময়ের নৌকা, এটা আমাদের মনির-পাপ্পুর নৌকা। আওয়ামী লীগকে যারা ভালোবাসে, যারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি তাদের এই নৌকার বাইরের যাওয়ার সুযোগ নেই।”
শামীম ওসমান আরো বলেন, “আমার মনে হয় না, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতা আছে যে, নৌকা ডুবিয়ে দিবে। এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমরা যখন জাগবো, অনেকে তখন ঘুমাবেন। এটাই স্বাভাবিক। কারণ যখন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জেগে উঠে, তখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাস্তায় থাকতে সাহস পায় না। আমাদের স্লোগান হবে, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।”
শামীম ওসমান আরো বলেন, “আমি জানি, সামনে যেদিন আসছে, আমাদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। ওই পরীক্ষায় আমাদেরই থাকতে হবে। যখন নারায়ণগঞ্জে পূজা হয়, যখন ওরা মণ্ডপে হামলা করতে চায়, ভেতর থেকে ছোবল মারতে চায়, তখন আমাদেরই রাস্তায় গাড়ি চালাতে হয়, অনেককে দেখি না। যখন মৌলবাদীদের আস্ফালন হয়, তখন আমার ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রতিটা অলিতে-গলিতে পাহারা দিয়েছে যাতে কেউ ধর্মের নামে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে না পারে। তাদের মনে কষ্ট দিয়েন না। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি হবে না।”