• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি, কেজি ২৬০


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩, ০৫:৩৫ পিএম
পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি, কেজি ২৬০
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের আড়ত। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

খুচরা এবং পাইকারী পর্যায়ের সব ব্যবসায়ীর কাছে অন্তত তিন থেকে সাত দিনের মাল মজুত থাকে। তাহলে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হতে পারে। পেঁয়াজ নিয়ে মারাত্মক রকমের কারসাজি করছেন তারা। ব্যবসায়ীদের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ডাকাতির সঙ্গেও তুলনা করছেন ক্রেতারা।

দেশে এক রাতের ব্যবধানে পাইকারিতে দাম বেড়ে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা। অথচ শুক্রবারেও একই পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। একইসঙ্গে দেশি পেঁয়াজও দাম বেড়ে প্রতি কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়।

সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, হঠাৎ পেঁয়াজের বাজারে সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। এর কারণ না জানলেও আড়ত মালিকদের দায়ী করছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজির দেশি পেঁয়াজেও হঠাৎ করে পাইকারিতে দাম বাড়িয়েছে আড়ত মালিকরা। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলে যেখানে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা, সেখানে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়বে কেন? এমন প্রশ্ন ক্রেতাদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজ কম। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার খবরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

কারওয়ান বাজারে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গতকাল সকালে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১৪০ টাকা। বিকেলে দাম কেমন গেছে জানি না। আজ সকালে আড়তে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি বাজারের অবস্থা এক রাতের ব্যবধানে পাল্টে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “শুনেছি ভারত নাকি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাহলে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়বে, দেশি পেঁয়াজের দাম তো বাড়ার কথা না। আসলে এখানে ‘কান টানলে মাথা আসে’ শব্দে একটি প্রবাদ আছে। পেঁয়াজের বাজারে হইছে তাই। সুযোগ পাইছে বড় ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে আমাদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। আমরা যে টাকায় পেঁয়াজ কিনবো তার থেকে সীমিত লাভে ব্যবসা করতে হবে।”

এদিকে বাজারের এই অস্থিরতাকে সাময়িক বলছেন আড়ত মালিকরা। নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে ওঠা শুরু হলে দাম কমে যাবে বলেও মত তাদের।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মেসার্স আহসান বাণিজ্যালয়ের আক্কাস জোয়ার্দার বলেন, “ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তাই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। তাই সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সাময়িক বেড়েছে।”

তিনি বলেন, “দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেলেই দাম আবার কমে যাবে।”

তবে পেঁয়াজের এই ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই সিন্ডিকেট না ভাঙলে আবারও ৩০০ টাকা ছাড়াবে দাম। এসব ব্যবসায়ীদের ডাকাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেক ক্রেতা।

মহাখালীর কাঁচা বাজারে আসা নাঈম নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কিছুদিন আগে পেঁয়াজ কিনলাম ১০০ টাকা কেজিতে। অথচ আজ দেখছি দেশি পেঁয়াজ ২৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজে বেড়েছে ১৬০ টাকা। এটা স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। এরা ডাকাত। দ্রুতই বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে কঠোর হতে হবে। তাছাড়া এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি ৩০০ পার করে ফেলবে।”

উত্তরা আজমপুরে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. আজাদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পরশু পেঁয়াজ কিনেছি ১২০ টাকা কেজিতে। সেই পেঁয়াজ আজ ২৫০ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না। সব ব্যবসায়ীর কাছে অন্তত তিন থেকে সাত দিনের মাল মজুত থাকে। তাহলে এভাবে দাম বাড়বে কেন? এভাবে পেঁয়াজের বাজার আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বাজার ব্যবস্থা আবারও ভেঙে পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে আমাদের কি হয়েছে। আমাদের দেশেই তো নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। যেগুলো দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব। অসাধু সিন্ডিকেট বাজার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে।”

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ২ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দুই বছরে আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টন। 
পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পণ্যটি পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ লাখ টন।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। এই চাহিদা মেটাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬৫ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

Link copied!