• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রেতা কম, মজুত করা পেঁয়াজে পচন


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩, ০২:৪০ পিএম
ক্রেতা কম, মজুত করা পেঁয়াজে পচন
চট্টগ্রামের আড়তে বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজের স্তুপ। ছবি-সংগৃহীত

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার খবরে রাতারাতি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছিল পেঁয়াজের দাম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এজন্য মজুত বাড়িয়েছিল পচনশীল এই পণ্যটির। কিন্তু হঠাৎ দ্বিগুণ দামের কারণে ক্রেতা কমে যাওয়ায় পণ্যটি নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন মজুতদার ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ীর মজুতের পেঁয়াজে পচন ধরেছে।

চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। সেখানকার আড়তগুলোতে রয়েছে পেঁয়াজের শত শত বস্তার স্তূপ। অনেক স্তুপে পচন ধরেছে। ক্রেতা না পেয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতারা। দু’দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। তবু বাজারে পর্যাপ্ত ক্রেতা নেই। তাই পচনশীল এই পণ্যটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাকতাই-খাতুনগঞ্জের সবক’টি আড়তই পেঁয়াজে পরিপূর্ণ। গুদামের পাশাপাশি বাইরেও বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজের স্তূপ। তবে আশানুরূপ ক্রেতা না থাকায় বিক্রি কম।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ১১০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন ক্রেতারা। এ নিয়ে হুলস্থুল পড়ে যায় সারা দেশে। অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।

গেল দুদিনে দাম কমতে থাকে। মানভেদে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। চীন ও ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভরে গেছে বাজার।

ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং চীনা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আর দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। পাইকারিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমলেও খুচরায় এখনও ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং চীনা পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় আমদানিকারকদের উসকানিতে আড়তদাররা এবার পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করে। ফলে দেশের সব স্থানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীদেরও কিছুটা কারসাজি ছিল। তবে এবার আড়তদাররা আড়ত থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে ফেলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সুবিধা করতে পারেননি। কারণ, বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠে গেছে। ক্রেতারা বাড়তি দামে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত ছিলেন। যার দরকার হয়েছে, মুড়ি কাটা ও পাতাসহ পেঁয়াজ কিনছেন। সঙ্গে যে পেঁয়াজ আড়ত থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, বাজারে তদারকির কারণে সেগুলো আসতে পারছে না। ফলে গুদামে নষ্ট হচ্ছে পেঁয়াজ। অনেক ক্ষেত্রে বস্তার পেঁয়াজে পচন ধরেছে।

নারায়ণগঞ্জ নগরীর দ্বিগুবাবুর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতারা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের পর থেকেই বিভিন্ন সরবরাহকারী দাম বাড়িয়ে কেজি প্রতি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের দাম ১৯৭ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা করে রাখে। সে দামেই ক্রয় করে দ্বিগুবাবুর বাজারের স্টকে আনা হয়। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ বিক্রয় অনেকটা কমে যায়। তার ওপর কেনার ৪ থেকে ৫ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় পচা শুরু করেছে স্টকে থাকা পেঁয়াজগুলো। তাই লোকসান কমাতে ১৯৭ টাকার ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১২০ টাকায়, ১৬০ টাকার পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী শামীম মিয়া বলেন, “পেঁয়াজে ভরে গেছে আড়ত। তবে ক্রেতা নেই। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ দামেও ক্রেতা নেই। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে।”

আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পেঁয়াজের দাম বাড়া বা কমার ওপর আড়তদারদের কোনো হাত নেই। আমদানিকারকরা যে দাম বলেন আমরা সে দামে বিক্রি করি।”

তিনি বলেন, “পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আনা হয়েছে। একইসঙ্গে আনা হয়েছে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজও। যার কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে। তবে দাম কমলেও এখানে আশানুরূপ ক্রেতা নেই। এরকম থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে দাম আরও কমে আসবে। কেননা পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। ৩-৪ দিনের বেশি বস্তায় রাখা যায় না। যে কারণে ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে।”

তিনি বলেন, “মঙ্গলবার থেকে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। দুই দিনে অন্তত ১২ ট্রাক দেশীয় পেঁয়াজ এ বাজারে আনা হয়েছে। সে সঙ্গে প্রচুর ভারতীয় এবং চীনের পেঁয়াজ এসেছে। যার কারণে দাম আপনা-আপনি কমে গেছে।”

এক ব্যবসায়ী বলেন, “কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে একশ্রেণির আমদানিকারক বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মুহূর্তেই টেলিফোনে যারা পেঁয়াজের বাজার অস্থির করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”

Link copied!